এক বাড়িতে ৪৩ মৌচাক, মিলছে লাখ টাকার মধু
দ্বিতল বাড়িটির ছাদ, জানালার কার্নিশ, গাছের ডাল—সবখানেই বাসা বেঁধেছে মৌমাছি। একটু পরপর মৌচাক থেকে মৌমাছি বের হয়ে উড়ে যাচ্ছে পাশের শর্ষেখেতে। মধু সংগ্রহ করে এনে জমা করছে চাকে। এমন দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই বাড়িতে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষেরা।
বাড়িটির অবস্থান রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামে। বাড়িটিতে গত ৫ বছরে মৌমাছিরা একে একে ৪৩টি মৌচাক তৈরি করেছে। গৃহকর্তা ছেকেন্দার আলী মুন্সী সৌদিপ্রবাসী। গত বছর এই বাড়িতে মৌচাকের সংখ্যা ছিল ২৭টি। সেগুলোর মধু বিক্রি করে মিলেছে প্রায় লাখ টাকা।
রাজবাড়ী শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দুরে রাজেন্দ্রপুর গ্রাম। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামে একটি ছোট্ট বাজার রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এলাকাটি পরিচিত কানাডা বাজার নামে। আশপাশে প্রচুর কৃষিজমি। জমিতে রোপণ করা হয়েছে শর্ষে। হলুদ শর্ষেখেতের দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। কানাডা বাজারের দক্ষিণ পাশে পাকা রাস্তার ধারে দ্বিতল ভবন। ভবনটির কাজ এখনো পুরো সম্পন্ন হয়নি। বাড়িটির ছাদ, জানালার কার্নিশ, গাছের ডালে মৌমাছির বাসা। বাড়ির উঠানে, মেঝেতে মৌমাছি মরে পড়ে আছে। মৌচাক থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করতে ছুটে চলছে। নিচে ছোট ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করছে। তবে মৌমাছি কাউকেই কামড় দিচ্ছে না। এমনকি মৌচাকের এক ফুটের মধ্যে গেলেও কামড় দেয় না।
গৃহকর্তা ছেকেন্দার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালে বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়িতে পরিবারের সদস্যরা বসবাস করলেও পরের বছর ২০১৬ সালে মৌমাছি বাসা বাঁধে। প্রতিবছর মৌচাকের সংখ্যা বেড়ে চলছে। গত বছর মৌচাকের সংখ্যা ছিল ২৭টি। এবার ১৬টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩টিতে। তবে এখনো আরও মৌচাক তৈরির সময় আছে। হয়তোবা মৌচাকের সংখ্যা আরও বাড়বে।
মৌমাছি কাউকেই কামড় দেয় না। শুধু আঘাত বা উৎপাতের শিকার হলে মৌমাছি আক্রমণ শুরু করে। এ কারণে কেউ যাতে ঢিল বা লাঠি দিয়ে খোঁচা না দেয় তা খেয়াল রাখতে হয়।
ছেকেন্দার আলী বলেন, ‘গত বছর আমি বিদেশ ছিলাম। শুনেছি গত বছর প্রায় এক লাখ টাকার মধু বিক্রি করা হয়েছে। তবে আমি লাভের টাকা নিই না। এতিমখানা ও হেফজখানার শিশুদের জন্য দিয়ে দিই। এবার এখনো মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ শুরু করা হয়নি।’
বাড়িটির পাশেই খেলছিল ছোট্ট শিশু মো. আবদুল্লাহ। সে বলল, সে সব সময় মৌচাকের আশপাশে ঘোরাফেরা করে। কিন্তু মৌমাছি তাকে কখনো কামড় দেয়নি। মধু খুব সুস্বাদু। মৌমাছি তার খুব ভালো লাগে।
মৌমাছিগুলো শীতের শুরুতে বাসা বাঁধে। জ্যেষ্ঠ মাসের শেষের দিকে চলে যায়। বছরের বাকি সময় চার–পাঁচটি চাক থাকে। মৌসুমের শুরুতে এসে আবারও মৌচাক তৈরি করে মৌমাছিরা। ছেকেন্দার আলী বলেন, মৌমাছি কাউকেই কামড় দেয় না। মৌচাকের চারপাশে দেয়াল থেকে ময়লা পরিষ্কার করতেও সমস্যা হয় না। শুধু আঘাত বা উৎপাতের শিকার হলে মৌমাছি আক্রমণ শুরু করে। এ কারণে কেউ যাতে ঢিল বা লাঠি দিয়ে খোঁচা না দেয় তা খেয়াল রাখতে হয়।
মৌচাক দেখতে আসা কলেজশিক্ষার্থী হৃদয় খান ও পিয়াল মাহমুদ বলেন, এলাকাটি নির্জন। শীতের সময়ে খেতগুলোতে শর্ষে আবাদ করা হয়। খেতগুলো হলুদ আর হলুদে একাকার হয়ে যায়। কিছুদিন আগে মৌচাকের কথা শুনে তিনি দেখতে এসেছেন।
রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. নূরুজ্জামান বলেন, মৌচাকে সাধারণত কয়েক হাজার মৌমাছি থাকে। মৌমাছি বাসা বাঁধার ক্ষেত্রে সাধারণত দুটি বিষয় খুব গুরুত্ব দেয়। নিরাপত্তা ও খাবার। এসব কারণেই তারা বিভিন্ন স্থানে বাসা তৈরি করে। ওই এলাকায় প্রচুর শর্ষেখেত। সেখান থেকে কর্মী মৌমাছি নেকটার সংগ্রহ করে। এ কারণে প্রতিবছর এত মৌমাছি সেখানে বাসা বাঁধে। তবে বাসা তৈরির ক্ষেত্রে একদল মৌমাছি আরেক দল মৌমাছির সঙ্গে মিলে বাসা তৈরি করে না। নিজেদের প্রয়োজনে তারা বাসা তৈরি করে।