ঋণ শোধে ২২ দিনের মেয়েকে বিক্রি করার অভিযোগ
ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য এক ভ্যানচালক তাঁর ২২ দিনের মেয়েশিশুকে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনা ঘটেছে রোববার নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কয়েন গ্রামে। এ ঘটনায় ওই ভ্যানচালকসহ তিনজনকে মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
ওই নবজাতকের নাম চাঁদনী খাতুন। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কয়েন গ্রামের ভ্যানচালক রেজাউল করিমের মেয়ে চাঁদনী। রোববার শিশুটি বিক্রি করা দেওয়া হলেও মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে ওই নবজাতককে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তার বাবা রেজাউল করিম। তিনি বলছেন, তিনি তাঁর মেয়েকে দত্তক দিয়েছেন।
বড়াইগ্রাম থানা, রেজাউলের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে কয়েন গ্রামের ভ্যানচালক রেজাউল করিম দাদন ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ, সানোয়ার হোসেন ও কালাম হোসেনের কাছ থেকে চড়া সুদে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেন। কিছু টাকা পরিশোধ করলেও বর্তমানে তা সুদ–আসলে ৮০ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এ টাকা পরিশোধের জন্য দাদন ব্যবসায়ীরা তাঁকে চাপ দিতে থাকেন। টাকা দিতে না পারায় দাদন ব্যবসায়ী কামাল হোসেন তাঁর ভ্যানটিও কেড়ে নিয়ে যান।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দাদন ব্যবসায়ীদের চাপে সম্প্রতি রেজাউল তাঁর স্ত্রী ফুলজান বেগমকে তাঁর মেয়েকে বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী এ প্রস্তাবে রাজি হননি। এতে রেজাউল মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে হাঁসুয়া দিয়ে নিজের পা ও ঘরের বেড়া কোপান। বাধ্য হয়ে তাঁর স্ত্রী সন্তান বিক্রিতে রাজি হন। সে অনুযায়ী রোববার দাদন ব্যবসায়ী আবদুস সামাদের মাধ্যমে তিনি তাঁর মেয়ে চাঁদনীকে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সরাইকান্দি গ্রামের রফিকুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে দেন।
চাঁদনীকে বিক্রি করে ১ লাখ ১০ হাজার পান রেজাউল। এর মধ্যে ৮২ হাজার টাকা তিনি দাদন ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেন। বাকি ২৮ হাজার টাকা দিয়ে সোমবার তিনি একটি ভ্যান কেনেন।
এলাকাবাসী সূত্র আরও জানায়, চাঁদনীকে বিক্রি করে ১ লাখ ১০ হাজার পান রেজাউল। এর মধ্যে ৮২ হাজার টাকা তিনি দাদন ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেন। বাকি ২৮ হাজার টাকা দিয়ে সোমবার তিনি একটি ভ্যান কেনেন। মঙ্গলবার নতুন ভ্যান বাড়িতে নিয়ে এলে চাঁদনীকে বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়। আশপাশের লোকজন তাঁর বাড়িতে আসেন ঘটনাটি জানার জন্য। খবর পেয়ে পুলিশ এসে রেজাউল করিম এবং দুই দাদন ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ ও সানোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়।
কয়েন বাজারের ভ্যান বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন জানান, আবদুস সামাদ ও রেজাউল করিম তাঁর কাছে ভ্যান কেনার জন্য ২৮ হাজার টাকা দিয়েছেন। টাকাটা রেজাউল তাঁর মেয়েকে অন্যকে দিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে পেয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। রেজাউলই তাঁকে এ কথা বলেছেন।
চাঁদনীকে বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে রেজাউলের স্ত্রী ফুলজান বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি শুধু কাঁদতে থাকেন। তবে রেজাউল করিম তাঁর মেয়েকে অন্যের কাছে দত্তক দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। দাদন ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ তাঁদের দেনা পরিশোধের জন্য শিশুসন্তান বিক্রির বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। তিনি জানান, রেজাউল স্বেচ্ছায় তাঁর মেয়েকে অন্যের কাছে দত্তক রেখেছেন।
বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রহিম বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে তাঁর শিশুসন্তানকে অন্যের কাছে দত্তক রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তবে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য তিনি শিশুসন্তানকে টাকার বিনিময়ে দত্তক দিয়েছেন কি না, তা জানা যায়নি।’