যাত্রীদের ভোগান্তি এড়াতে এবং যানবাহন পারাপার নিশ্চিত করতে এবার ঈদের পাঁচ দিন আগে এবং পাঁচ দিন পর পর্যন্ত মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ির পারাপার বন্ধ থাকবে। তবে পচনশীল ও জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার হতে পারবে।
রোববার দুপুরে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় পদ্মা রিভারভিউয়ের হলরুমে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ এই তথ্য জানান। ‘ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিরাপদে যাত্রী পরিবহন’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
বিগত সময় ঈদের আগে তিন দিন ও ঈদের পরে তিন দিন পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার বন্ধ থাকলেও এবার তা বাড়িয়ে ১০ দিন করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার বন্ধ থাকায় এবার ঈদের আগে পাটুরিয়ায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ার আশঙ্কা আছে। এ কারণে নৌ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঈদের আগে ও পরে মোট ১০ দিন পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার বন্ধ থাকবে। ফলে এ সময় পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়ায় না আসার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন জানায়, ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ হয়ে ঈদে বাড়ি যান। এসব যাত্রী ও যানবাহন নিরাপদে পারাপার করতে ঘাটসংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে নিয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় স্থানীয় উলাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উন্নয়নকাজ, লোকাল গাড়ি ও তিন চাকার যান ঈদযাত্রায় ভোগান্তির কারণ হতে পারে।
সাভারের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে মহাসড়কের উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক বিভাজক বসানো হয়েছে। আগের মতো দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসগুলোকে আর ধীরগতিতে চলতে হবে না।
সভায় লঞ্চমালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ২১টি ও আরিচা-কাজীরহাট নৌপথে ১২টি লঞ্চ চলাচল করবে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হবে না।
ঈদে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে সভায় জানান বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ। তিনি বলেন, এবার ঈদে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ২১টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হবে। বর্তমানে ১৯টি ফেরি দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে আরও দুটি রো রো (বড়) ফেরি বহরে যুক্ত হবে।
যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান। তিনি বলেন, এবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও হেমায়েতপুর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ঘাট এলাকায় পুলিশের আট শতাধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের পৃথক তিনটি ভ্রাম্যমাণ (টহল) দল কাজ করবে। এ ছাড়া কাজ করবেন আনসার সদস্যরাও।
সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা জহুরা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিবালয় সার্কেল) নুরজাহান লাবনী, র্যাব-৪–এর সিপিসি-৩–এর মানিকগঞ্জের কোম্পানি কমান্ডার আরিফ হোসেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান খান, শিবালয় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার, শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন, জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।