ইয়াবা কারবারিদের এলাকা ছাড়তে বললেন সাবেক সাংসদ বদি

সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন আবদুর রহমান বদি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে
ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে টেকনাফের ইয়াবা কারবারিদের এলাকা ছাড়তে বললেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা ইয়াবা তালিকায় ‘ইয়াবার মদদদাতা’ হিসেবে তাঁর নাম আছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় তাঁর (বদি) ছোট পাঁচ ভাইসহ পরিবারের ঘনিষ্ঠ ২৬ জনের নাম আছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত আটজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে ইয়াবাসহ আত্মসমর্পণ করে দেড় বছর কারাগারে থেকে সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়ে এলাকায় অবস্থান করছেন। তারপরও ইয়াবা চোরাচালান থেমে নেই। বরং আগের তুলনায় শতগুণ বেড়ে গেছে জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক সাংসদ যেখানে দাঁড়িয়ে ইয়াবাবিরোধী কিংবা ইয়াবা কারবারিদের এলাকা ছাড়তে বললেন, তাঁর (বদি) আশপাশে থাকা লোকজনই তো সেই কারবারে জড়িত। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করতেই বদির এই ঘোষণা বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

মঙ্গলবার রাতে টেকনাফ পৌরসভার ২, ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ ইসলামের সমর্থনে পৃথক তিনটি সমাবেশ হয়। মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম সম্পর্কে বদির চাচা।

সমাবেশগুলোতে উপস্থিত নারী-পুরুষের উদ্দেশে সাবেক সাংসদ বদি ইয়াবা কারবারিদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘পৌর নির্বাচনের আগে যদি ইয়াবা কারবারিদের কাউকে রাস্তাঘাটে সামনে পাই, খবর আছে। নৌকার বিপক্ষের কাউকে মাঠে পাওয়া গেলে তখন করার কিছুই থাকবে না।’ এ বিষয়ে উপস্থিত অভিভাবকদেরও সতর্ক করেন বদি। সমাবেশ থেকে বদির এই বক্তব্য ফেসবুক লাইভ করা হয়। চতুর্থ ধাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর এই পৌরসভার ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা। পৌরসভার ভোটারের সংখ্যা ১৬ হাজার ৮৫।

দলীয় সূত্র জানায়, টেকনাফ পৌরসভার মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে চারজনের নামের তালিকা পাঠায় জেলা আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর, টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাভেদ ইকবাল চৌধুরীর নামও ছিল। কিন্তু তৃতীয়বারের মতো দলের মনোনয়ন পান মোহাম্মদ ইসলাম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা, ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকা, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মদদদাতা, লোকজনকে মারধরসহ নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকায় গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি বদি। কিন্তু দলের মনোনয়ন পান বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার। চাচা মোহাম্মদ ইসলামকে বিজয়ী করতে বদি আগেভাগে মাঠে নেমেছেন।

মঙ্গলবার রাতে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনী জনসভায় সাবেক সাংসদ বদি ইয়াবা কারবারিদের হুঁশিয়ার করে আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘যারা যারা এখানে নব্য ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আছ, মাল (ইয়াবা) তুল। তারা আল্লাহর ওয়াস্তে ভোটের ভিতর চলে যাও। তোয়ারা আল্লাহর ওয়াস্তে এলাকা ছাড়ি জ’গই। ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ইয়াবা সিন্ডিকেটকারীরা ষড়যন্ত্র গরি নৌকাডুবি গরার চেষ্টা গরর। এই নৌকা ইয়ান বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা। ইয়ান বিশ্বাস গরি হাজি মোহাম্মদ ইসলামকে দিয়েছে। ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকা হাজি ইসলাম সাহেব দেয় নাই বলে তোমরা ভোট গরিবার চিন্তা গরর দে। যদি ইয়াবার তালিকা দিত তইলে বাপ-দাদা বেগুনি পদ ধরিতা।’

সাবেক সাংসদ নির্বাচনী সমাবেশে আরও বলেন, ‘যারা ইয়াবা ব্যবসা করছ, সুন্দর সুন্দর মোটরসাইকেল নিয়ে রং–তামাশা করছ, ঘরে বউ-ছেলে নিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছ, তোমরা মেহেরবানি করে ভোটের পরে এলাকায় এসো। ভোটের আগে যদি তোমাদের রাস্তাঘাটে পাওয়া যায়, যদি ভোটের সময় পৌরসভার ভেতরে রাস্তাঘাটে নৌকার বিরুদ্ধে কাউকে পাওয়া যায়, আমাকে দোষারূপ করা যাবে না। তোমরা আর কেউই শান্তিতে থাকতে পারবা না।’

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, সাবেক সাংসদ এমনিতে বিতর্কিত একজন মানুষ। তিনি মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনী সমাবেশে যাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে ইয়াবার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তাঁর আশপাশে দেখে বক্তৃতা দেওয়া উচিত। এখন তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দেশ ছাড়তে বলছেন, তিনি দুই দফায় ১০ বছর সাংসদ ছিলেন, এখন তাঁর স্ত্রীর সাংসদ হওয়ার মেয়াদ তিন বছর পার হচ্ছে। ক্ষমতার এই ১৩ বছরে তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দেশ ছাড়ার কথা বলেননি। তখন থেকেই যদি তিনি (বদি) ইয়াবার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেন, তাহলে টেকনাফের মানুষ বদনামের ভাগীদার হতো না। ক্রসফায়ারে শতাধিক মানুষের মৃত্যুও হতো না। এখন তাঁর সুবিধা-অসুবিধার জন্য ইয়াবা ব্যবসায়ীদের এলাকা ছাড়তে বলছেন। তাঁর (বদি) এই দ্বৈত নীতি পরিহার করা উচিত।

নুরুল বশর আরও বলেন, ‘মেয়র পদে আমরা চারজন মনোনয়ন চেয়েছিলাম। দল নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছে বদির চাচা মোহাম্মদ ইসলামকে। আমরাও নৌকার পক্ষে আছি। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করার সুযোগ কারও নেই।’