ইতালি যেতে ভূমধ্যসাগরে প্রাণহানি, তরুণ সাজ্জাদের লাশটা চায় পরিবার

ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে অতিরিক্ত ঠান্ডায় মারা যাওয়া সুনামগঞ্জের তরুণ সাজ্জাদ আহমদ
ছবি: সংগৃহীত

সাজ্জাদ আহমদ (২৫) আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের সন্তান। একসময় লেখাপড়া ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য মা-বাবার কাছে আবদার করেন। প্রথমে রাজি না হলেও পরে ছেলের পীড়াপীড়িতে রাজি হয় পরিবার।

এরপর ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাড়ি ছাড়েন সাজ্জাদ। কিন্তু ইতালি পৌঁছানোর আগেই লিবিয়া থেকে ইতালির ল্যাম্পেদুসা দ্বীপে যাওয়ার পথে ২৫ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে অতিরিক্ত ঠান্ডায় অন্য আরও ছয় বাংলাদেশির সঙ্গে মৃত্যু হয় সাজ্জাদের।

ইতালির রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস রোববার এই সাত বাংলাদেশির পরিচয় প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে সাজ্জাদ আহমদের বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামে। বাবা নূরুল আমিন, মা রহিমুন্নেসা। ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শোকে পাথর হয়ে গেছেন তাঁরা। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। তাঁরা অন্তত ছেলের মুখটা শেষবারের মতো দেখতে চান। আর কিছু না ছেলের লাশটা তাঁরা চান।

সাজ্জাদ আহমদের চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন মুঠোফোনে বলেন, সাজ্জাদেরা চার ভাই, চার বোন। ভাইদের মধ্যে সাজ্জাদ দ্বিতীয়। পরিবার আসলে তাঁকে বিদেশে দিতে চায়নি। কিন্তু তাঁর চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত রাজি হতে হয়। পরে জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের লালুখালি গ্রামের রফিক মিয়া নামের এক দালালের সঙ্গে সাজ্জাদকে ইতালি পাঠানোর চুক্তি করা হয়। এ জন্য সাত লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রথমে সাজ্জাদকে পাঠানো হয় দুবাই। পরে লিবিয়া। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। সাজ্জাদকে এভাবে বোটে করে ইতালি পাঠানোর কথা ছিল না। এ জন্য তাঁরা দালাল রফিক মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করবেন।

জাহাঙ্গীর হোসেন আরও বলেন, সাজ্জাদ আহমদের সঙ্গে পরিবারের সর্বশেষ যোগাযোগ হয় ১৭ জানুয়ারি। তিনি ইতালি রওনা দেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিলেন। আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। ভূমধ্যসাগরে প্রাণহানির পর বিভিন্নভাবে সাজ্জাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন তাঁরা। এর পর থেকে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।

সাজ্জাদ আহমদের লাশ দেশে আনতে পরিবারের পক্ষ থেকে রোববার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ইতালিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে উল্লেখ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সাজ্জাদের মা-বাবা শয্যাশায়ী। পরিবারের সবার এখন একটাই চাওয়া, সাজ্জাদের লাশ। সরকার যেন দ্রুত তাঁর লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন