আয় কমলেও বেড়েছে খরচ

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি বিপদে আছেন। আয় না বাড়ায় তাঁরা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

দুই বছর আগে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে মোটা চাল কিনে সংসার চালাতেন দুলাল মিয়া। তখন তিনি রিকশা চালিয়ে যা আয় করতেন, তা দিয়ে মোটামুটি দিন চলে যেত। এখন সেই চাল কিনতে হচ্ছে ৪৪–৪৮ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে উপার্জন ক্ষমতাও হারিয়েছেন ৬০ বছর বয়সী দুলাল। এখন প্রতিবেশীদের সহায়তা আর কিশোর ছেলের আয় দিয়ে কোনোমতে ভীষণ কষ্টে দিন পার করছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ শহরের চরশোলাকিয়া ব্যাপারী বাড়ি মোড়সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি দুলালের। আক্ষেপের সঙ্গে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি ভাতার কার্ডের জন্য অনেকবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বলেছেন। কিন্তু কেউ তাঁর কথা শোনেনি। দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতির সময়ে জীবন যেন তাঁর আর চলছে না।

দুলাল মিয়ার চার মেয়ে ও এক ছেলে। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ে জান্নাত পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। দুর্ঘটনায় বাবার পা হারানোর কারণে তার পড়ালেখাও বন্ধ। চারজনের সংসারে ৫০–৬০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল, তিন লিটার তেল লাগে।

দুলালের স্ত্রী মেমরাজ আক্তার বলেন, পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে দুবেলা খাবার জোটানো এখন দায়, সেখানে মেয়ে কীভাবে পড়বে? সবার ছোট ছেলে শরীফ (১৫) মোটরসাইকেলের গ্যারেজে কাজ করে। সেখান থেকে ১০০–২০০ টাকা পায়। সেটা দিয়েই এখন কোনোরকমে সংসার চলছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় সাত মাস আগে স্বামীর পায়ে কাটা গাছ পড়ে যাওয়ায় ঊরু পর্যন্ত ডান পা কেটে ফেলতে হয়। স্বামীকে সুস্থ করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়। তাঁরা করোনা মহামারির সময় কোনো সরকারি সহায়তা পাননি। এখন পর্যন্ত তাঁরা টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডও পাননি।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে কিশোরগঞ্জ শহরতলির বাকপাড়া এলাকার খোদেজা আক্তারের জীবনেও। ৪ বছর বয়সী এক মেয়ে আর ১২ বছর বয়সী এক ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছেন তিনি। স্বামী মনু মিয়া প্রায় তিন বছর আগে মনু মিয়া মারা যান। খোদেজা বলেন, বড় দুই ছেলে সংসার নিয়ে আলাদা। ছোট ছেলে হোটেল বয়ের কাজ করে। সামান্য আয় হলেও এতে তাঁর সংসার চলে না। আর এখন বাজারের যে অবস্থা, তাতে চলা অনেক কঠিন বলে জানালেন তিনি।