আড়িয়াল খাঁ নদে রাতে চলে বালু উত্তোলন

আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রোববার সকালে মাদারীপুর শহরের পাঠককান্দি এলাকায়
প্রথম আলো

মাদারীপুর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা লিটন জোমাদ্দার। নদীর পাড় ঘেঁষে তাঁর বহুতল ভবন। আড়িয়াল খাঁ নদে অবাধে বালু উত্তোলন করায় ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে তাঁর ভবনটি। সম্প্রতি লঞ্চঘাট এলাকায় দুটি বাড়ির আঙিনা আড়িয়াল খাঁর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদ থেকে অবাধে বালু তোলায় ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে দুই পাড়ের অসংখ্য স্থাপনা ও ফসলি জমি।

লিটন জোমাদ্দার বলেন, প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর দিনে বালু তোলা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু রাতে বালু তোলা হচ্ছে। রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত আড়িয়াল খাঁ নদে যন্ত্র বসিয়ে দিয়ে বালু তোলেন এক ছাত্রলীগ নেতা। দিনের বেলা খনন যন্ত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

একই অভিযোগ করেন মহিষেরচর এলাকার বাসিন্দা নুরু মুনশি। তিনি বলেন, রাত একটু গভীর হলে ড্রেজার চালানো শুরু হয়। নদ থেকে বালু তোলার ফলে এলাকায় প্রতিবছরই ভাঙছে। দিনে দিনে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে।

তাঁর বাড়ির পাশে ১২ মাসই ড্রেজার চলছে। প্রশাসনের ভয়ে রাতে ড্রেজার চালানো হয়। সারা রাত ড্রেজারের শব্দ শুনতে পান।
সাইদুর কাজী, স্থানীয় বাসিন্দা
দীর্ঘদিন ধরে আড়িয়াল খাঁ নদের বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলন করে আসছেন জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে মিঠু হাওলাদার। প্রতি রাতে আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে চার-পাঁচটি বাল্কহেডে বালু ভরে জেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আড়িয়াল খাঁ নদের বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলন করে আসছেন জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে মিঠু হাওলাদার। প্রতি রাতে আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে চার-পাঁচটি বাল্কহেডে বালু ভরে জেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান তিনি। সেখানে ব্যবসায়ীদের কাছে বালু বিক্রি করেন।

এ ছাড়া সদর উপজেলার কুমার নদের মস্তফাপুর এলাকায় বালু উত্তোলন করেন সুমন মোল্লা নামের এক ব্যক্তি। অন্যদিকে কালকিনি উপজেলার ফাঁসিয়াতলা এলাকায় বড় নদীর মুখে একাধিক খনন যন্ত্র বসিয়ে রাতে বালু উত্তোলন করেন কালকিনি পৌর মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদারের ভাই বেলায়েত হাওলাদার। উপজেলার পালরদী নদী থেকে আকবর মোল্লা ও শহীদ মোল্লা নামের আরও দুই ব্যক্তি রাতে বালু উত্তোলন করেন।

আড়িয়াল খাঁ নদের লঞ্চঘাট মাদারীপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। নদের ওপারে পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর গ্রাম। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় দুই পাড়েই ভাঙন দেখা দিয়েছে। অসংখ্য স্থাপনা ও ফসলি জমি রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। গত শনিবার রাত ১১টায় লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদের ওপারে খনন যন্ত্র বসানো রয়েছে। ওই যন্ত্র দিয়ে বালু তুলে বাল্কহেডে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

মাসুদ রানা নামের একজন শ্রমিক জানান, এটা মিঠু হাওলাদারের ড্রেজার। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠু হাওলাদার বলেন, ‘আমার কোনো ড্রেজার চলে না। রাতে নদীতে অন্য লোকের ড্রেজার চলে।’

যাঁরা নিষেধাজ্ঞা মানছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার ধ্বংস করা ও জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। রাতে যেসব জায়গায় ড্রেজার চলছে, সেসব জায়গায় অভিযান চালানো হবে।
রহিমা খাতুন, জেলা প্রশাসক
মাদারীপুরে রাতের আঁধারে আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে বালু উত্তোলন করা ড্রেজারগুলো ভোর হলেই সরিয়ে আনা হয় কুমার নদে। রোববার সকালে শহরের পাঠককান্দি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বালু তোলার বিষয়ে কালকিনি পৌরসভার মেয়রের ভাই বেলায়েত হাওলাদার বলেন, তাঁর ড্রেজারের ব্যবসা আছে। তবে এখন তা বন্ধ করে রেখেছেন। প্রশাসনের ঝামেলায় চার মাস চালানো হয়নি। আকবর মোল্লা ও শহীদ মোল্লা বলেন, তাঁদের নামে ভুল কথা বলা হচ্ছে।

সদর উপজেলার কুমার নদের মস্তফাপুর এলাকা থেকে সুমন মোল্লা বালু তুলে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সম্পর্কে সুমন মোল্লা বলেন, তাঁর নিজের ড্রেজার নেই। বাল্কহেড ধরে বালু কিনে এনে বিক্রি করেন। তাঁদের কাজ বৈধ।

ওই এলাকার বড় ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা সাইদুর কাজী বলেন, তাঁর বাড়ির পাশে ১২ মাসই ড্রেজার চলছে। প্রশাসনের ভয়ে রাতে ড্রেজার চালানো হয়। সারা রাত ড্রেজারের শব্দ শুনতে পান।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, যাঁরা নিষেধাজ্ঞা মানছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার ধ্বংস করা ও জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। রাতে যেসব জায়গায় ড্রেজার চলছে, সেসব জায়গায় অভিযান চালানো হবে।