আড়ানীর পৌর মেয়রের বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার, স্ত্রীসহ আটক ৩

রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র, গুলি, নগদ টাকা ও মাদকদ্রব্য।
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীর বাড়িতে রাতভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধার করেছে। মেয়র মুক্তার আলীকে না পেয়ে পুলিশ তাঁর স্ত্রীসহ তিনজনকে আটক করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়।

এর আগে মেয়র এক কলেজশিক্ষকের বাসায় ঢুকে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের সামনে শিক্ষককে মারধর ও ভাঙচুর করেন। এই অভিযোগে গতকাল রাত ১২টার পর বাঘা থানায় মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ এই অভিযান চালায়।

অভিযানে আটক হয়েছেন মেয়রের স্ত্রী জেসমিন খাতুন, ভাতিজা সোহান ও শান্ত। উদ্ধার করা হয়েছে একটি পিস্তল, তিনটি ওয়ান শুটার গান, ৪০ টির বেশি গুলি, মাদকদ্রব্য।

পুলিশ আড়ানী পৌর এলাকার পিয়াদাপাড়া মহল্লায় অবস্থিত মেয়রের বাড়িতে তাঁকে ধরার জন্য অভিযান চালাতে গিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদের সন্ধান পায়। অভিযান শেষে প্রাথমিকভাবে বাঘা থানার পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মেয়র মুক্তার আলী কয়েকজন লোককে নিয়ে আড়ানী দক্ষিণ পাড়ায় কলেজশিক্ষক মনোয়ার হোসেন ওরফে মজনুর বাড়িতে যান। তাঁকে মারধর করেন। তাঁর ছেলে নাফিস সাদিক ও স্ত্রী দিলরুবা বেগম বাধা দিলে মেয়র ছেলেকে মারধর করেন। কলেজশিক্ষকের স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। এরপর মনোয়ার হোসেনকে রাতেই বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। রাত ১২টার পর তিনি বাদী হয়ে বাঘা থানায় একটি মামলা করেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনোয়ার হোসেন আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একজন পল্লিচিকিৎসক হিসেবে বাসার নিচতলায় চেম্বারে বসে রোগী দেখেন। সেখানেই মেয়র এসে হামলা চালান। তিনি বলেন, এক দিন শুধু মেয়রের কার্যালয়ে একটি কাগজ নিতে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া মেয়রের সঙ্গে তাঁর কোনো দিন কথা হয়নি। গত পৌরসভা নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট করেছিলেন। আর মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। এ কারণে তাঁর ওপর মেয়রের রাগ থাকতে পারে। এ ছাড়া তিনি অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে রাতে মুক্তার আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কোনো কথা বলবেন না। কিছুক্ষণ পর অবশ্য তিনি ফোন করে বলেন, ‘বুধবার সকালে কথা বলব। আপনাকে আমার পৌরসভায় আমন্ত্রণ জানালাম। তাঁকেও (মনোয়ার হোসেন) সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হবে।’ আজ সকালে ফোন করা হলে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম আজ বুধবার সকালে অভিযানের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অভিযান চালানোর সময় মেয়র বাড়িতে ছিলেন না। মেয়র মুক্তারের বাড়ি থেকে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র, নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, ১৬ লাখ ও দেড় লাখ টাকার দুটি চেক, তাজা গুলি ৪৩টি, ব্যবহৃত গুলির খোসা ৪টি, ইয়াবা ২০টি, গাঁজা ১০ গ্রাম, হেরোইন ৭ গ্রাম উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে।