আসামির স্বীকারোক্তি থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অভিযান, গ্রেনেড-গুলি উদ্ধার
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর থেকে এবার একজন আসামির স্বীকারোক্তি ১৫টি গ্রেনেড, ২৫টি বোস্টার ও ৫১০টি গুলি উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
সিটিটিসি ইউনিট আজ সোমবার বিকেল ৪টায় চুনারুঘাট থানায় সংবাদমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। এর আগে একই স্থান থেকে র্যাব ও বিজিবি বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে।
মো. আসাজাদুজ্জামান বলেন, পুলিশ গতকাল রোববার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ১টি পিস্তল ও ৪টি গুলিসহ অমিত ত্রিপুরা (২৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বাড়ি খাগড়াছড়ির পানছড়িতে। পুলিশকে তিনি জানান, তাঁর কাছে থাকা অস্ত্র ছাড়া আরও বিপুলসংখ্যক অস্ত্র মজুত আছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, এ অস্ত্রগুলো হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গহিনে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। অমিতের এ স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিট আজ সোমবার ভোর থেকে সাতছড়িতে এক অভিযান চালায়। তাদের সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া অমিত ত্রিপুরা। আসাদুজ্জামান বলেন, ভোর থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টানা ১০ ঘণ্টা অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানকালে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতরে ঢাকা—সিলেট পুরাতন মহাসড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার বনের ভেতরে দুটি স্থানে মাটি খুঁড়ে কিছু অস্ত্র উদ্ধারের আলামত দেখতে পান। চিহ্নিত গর্ত খুঁড়ে ১৫টি গ্রেনেড, ২৫টি বোস্টার ও ৫১০টি গুলি উদ্ধার করা হয়।
আজ সকালে সাতছড়ি গিয়ে দেখা যায়, পুরো উদ্যান এলাকাটি ঘিরে রাখে সিটিটিসি ইউনিট। খবর পেয়ে সকাল থেকে গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তবে কাউকে বনের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অপেক্ষার পর দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় অস্ত্র উদ্ধারকাজ শেষ হলে গণমাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
বেলা ৩টার দিকে সিটিটিসি ইউনিটের সদস্যরা বনের ভেতর থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো তাঁদের গাড়িতে ওঠান। এ সময় অভিযানের বিস্তারিত জানাতে গণমাধ্যমকর্মীদের চুনারুঘাট থানায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়। এ অস্ত্র উদ্ধারের পর গণমাধ্যমকর্মীরা বনের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলেও কাউকে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
পরে বিকেল ৪টায় সিটিটিসি ইউনিট চুনারুঘাট থানা প্রাঙ্গণের সামনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সিটিটিসি ইউনিটের যুগ্ম কমিশনার ইলিয়াস শরীফ, স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের কর্মকর্তা আবদুল মান্নান, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী, চুনারুঘাট থানার ওসি আলী আশরাফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় গণমাধ্যমকে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পাহাড়ের ভেতরে দুটি স্থানে মাটি খুঁড়ে একটি গর্ত থেকে উল্লিখিত পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। একই এলাকা থেকে বিভিন্ন সময় র্যাব ও বিজিবি অভিযান চালিয়ে যেসব গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে, সেসবের সঙ্গে নতুন উদ্ধার করা গোলাবারুদের সাদৃশ্য রয়েছে। এগুলো পুরোনো গোলাবারুদ ও বেশ বিপজ্জনক। এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আশরাফ প্রথম আলোকে জানান, এ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এর আগে একই বন থেকে র্যাব ও বিজিবি ৭ বার অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এসব উদ্ধারে বেশ কয়েকটি মামলা হলেও পুলিশ তদন্তে বের হয়নি এসব অস্ত্রের উৎস। এসব অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে চুনারুঘাট থানায় বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে ৭টি মামলা ও ২টি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। মামলাগুলো প্রথমে চুনারুঘাট থানা-পুলিশ ও পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ তদন্ত করে। ৭টি মামলার মধ্যে ৫টি মামলায়ই পুলিশ কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। অবশেষে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে বলে আদালতের একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আশরাফ প্রথম আলোকে জানান, মামলাগুলো অনেক আগে হওয়ায় তাঁদের কাছে এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। তবে ৭টি মামলা ও ২টি সাধারণ ডায়েরি হওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।