চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে নিখোঁজ ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রবিউল ইসলাম ওরফে রবিনকে (২৭) ফেরত পেতে আকুতি জানিয়েছেন তাঁর মা ফাইমা খাতুন। আজ সোমবার সকালে রবিউলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফাইমা খাতুন বুক চাপড়াচ্ছেন আর বলছেন, ‘আল্লাহ আমার ছেলেরে তুমি ফিরায়ে দাও।’
নিখোঁজ রবিউলের বাড়ি নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন চকপাথুরিয়া এলাকায়। তিনি সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনে ফায়ার ফাইটার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিয়ে তিনি নিখোঁজ হয়েছেন।
গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সর্বশেষ মা ফাইমা খাতুনের সঙ্গে কয়েক সেকেন্ড কথা হয় রবিউলের। আগুন নেভানোর কাজে যাওয়ার সময় মাকে কল দিয়ে দোয়া চেয়েছিলেন রবিউল। কাজ থেকে ফিরে এসে সকালে মায়ের সঙ্গে কথাও বলতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আর কথা হয়নি। ছেলে নিখোঁজের খবর শোনার পর থেকেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন ফাইমা।
ফাইমা খাতুন জানান, রোববার ভোর ৫টার দিকে ছেলের মুঠোফোনে কল দিলে ফায়ার স্টেশন কার্যালয়ের একজন কল ধরে বলেন, ‘রবিউল ডিউটিতে গেছেন, তাঁর জন্য দোয়া করেন।’ সকাল ৯টার দিকে বাসায় এসে টেলিভিশন চালু করে দেখেন, আগুনের সংবাদ। অনেক লোক মারা গেছেন।
ছেলের সন্ধানে বাবা খাদেমুল ইসলাম তাঁর ছোট ছেলে রনি ও প্রতিবেশী সাইদুর রহমান নামের একজনকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন। যাওয়ার পথে খবর পান, ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রবিউল নামের এক ফায়ার সার্ভিসকর্মী ভর্তি আছেন। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই রবিউলের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। পরে সেখানে গিয়ে নিরাশ হওয়ার পর রাতে আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে প্রতিবেশী সাইদুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সীতাকুণ্ডে রবিউলের সহকর্মীরা তাঁর কোনো খোঁজ জানাতে পারেননি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পুড়ে যাওয়া চারটি লাশ আছে। কিন্তু লাশগুলো বীভৎস, দেখে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। লাশ শনাক্তের জন্য রবিউলের বাবার শরীর থেকে হাসপাতালের লোকজন নমুনা নিয়েছেন। ডিএনএ টেস্টের ফলের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।
রবিউলেরা তিন ভাই-বোন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রবিউল বড়। বাবা কৃষক ও মা গৃহিণী। প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম কর্মস্থল হিসেবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ফায়ার ফাইটার হিসেবে যোগ দেন রবিউল। গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি।
রবিউলের চাচা নাজিম উদ্দিন বলেন, সামান্য জমি ও কিছু জমি বর্গা নিয়ে ধান-সবজি চাষ করে অনেক কষ্ট করে তাঁর বড় ভাই তিন ছেলেমেয়ে মানুষ করেছেন। বড় ভাতিজাকে নিয়ে ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। চাকরি নেওয়ার সময় কিছু জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। তবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর সংসারে অনেকটা সচ্ছলতা ফিরেছিল। কিছুদিন পর আধা পাকা বাড়ি ভেঙে নতুন করে বাড়ি করার পরিকল্পনা ছিল রবিউলের। তাঁর বিয়ের জন্য ভাই-ভাবি পাত্রীও দেখছিলেন।