আলোর পথে ফিরলেন ২৪ জন
সীমান্তে চুরি, চোরাচালানসহ নানা ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁরা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মানুষগুলোকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়। এখন ওই ২৪ জন আর কোনো অপরাধে জড়াবেন না বলে আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকার করেছেন।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী বাঁশতলা এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার বিজিবির পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শিরোনাম দেওয়া হয় ‘আলোর পথে’। অনুষ্ঠানে ওই ২৪ জনকে ফুল দিয়ে বরণ করেন বিজিবির সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাকসুদুল আলম।
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৭ জানুয়ারি দোয়ারাবাজার উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের নুরু মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তি সীমান্তের ওপারে সুপারি চুরি করতে গিয়ে খাসিয়াদের গুলিতে নিহত হন। এক সপ্তাহ পর ভারতীয় পুলিশ বাংলাদেশের পুলিশের কাছে নুরু মিয়ার লাশ হস্তান্তর করে। এরপরই বিজিবি ওই সীমান্ত এলাকায় যাঁরা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের অপরাধ জগৎ থেকে ফিরিয়ে আনতে নানাভাবে আলোচনা শুরু করে। প্রথমে এমন ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। এলাকার ২৪ ব্যক্তি অপরাধমূলক কাজ ছেড়ে দিতে রাজি হন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিকেলে বাঁশতলা এলাকায় বিজিবি আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেন।
মানুষগুলোকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রেখেছেন স্থানীয় বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. খুরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘ আমরা বিষয়টি বোঝানোর পর মানুষগুলো অপরাধমূলক কাজ ছেড়ে দিতে রাজি হন। এ রকম একটি ভালো কাজ করতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে।’
বাঁশতলা গ্রামের বাসিন্দা আসকর আলী বলেন, ‘আমার একটা চায়ের দোকান ছিল। পুঁজির অভাবে সেটি বন্ধ। অভাবের কারণেই এসব করতাম। এখন স্যার (বিজিবির অধিনায়ক) বলছেন, পুঁজি দেবেন। আমরা সবাই বলেছি, আর কোনো অপরাধ করব না। এখন থেকে ভালো পথে চলব।’
অনুষ্ঠানে বিজিবির পক্ষ থেকে এই ২৪ জনকে আর্থিক সহায়তা, রেশন, কর্মসংস্থানসহ নানাভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।
বিজিবি কর্মকর্তা মাকসুদুল হক বলেন, তাঁরা দুজনকে বিজিবি ক্যাম্পে পাচক হিসেবে চাকরি দেবেন। একজনকে চায়ের দোকান দেওয়ার জন্য অর্থের এবং অন্যদের প্রাথমিকভাবে রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। একই সঙ্গে ওই এলাকার সীমান্ত হাটে তাঁদের কাজ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করা হবে।