আলুর ভালো দামে চাষিদের মুখে হাসি
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার চলতি মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আলুচাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। দাম ভালো পাওয়ায় অনেক চাষি খেতেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
চাষিদের এ রকম সুদিনে অবশ্য বিপাকে পড়েছেন হিমাগারের মালিকেরা। কারণ, হিমাগার খালি পড়ে থাকার আশঙ্কা করছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। এ কারণে হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলুচাষিদের পেছনে ধরনা দিচ্ছে। এদিকে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে চাষিদের উৎসাহিত করতে ঋণ দিচ্ছে তারা (হিমাগার কর্তৃপক্ষ)।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার তারাগঞ্জে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। গত বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় অনেক চাষি এবার তামাকের পরিবর্তে আলুর চাষ করেছেন। এ কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর ৬৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আলুর চাষ হয়েছে।
কয়েকজন চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বাজারে আলুর দাম তুলনামূলক বেশি। খেতেই প্রতি কেজি গ্রানুলা (সাদা) জাতের আলু ১০-১১ টাকা, কার্ডিনাল, এস্টারিক্স (লাল) জাতের আলু ১২-১৩ টাকা, শিলবিলাতি, ঝাউ, এন্দুরকানি আলু ১৮-১৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম ভালো পেয়ে কৃষকেরা আলু খেতেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় হিমাগার খালি পড়ে থাকার আশঙ্কায় হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলুচাষিদের পেছনে পেছনে ছুটছে।
বামনদিঘী গ্রামের আলুচাষি লেবু মিয়া বলেন, ‘চার বছর আগোত ৩৪ হাজার টাকা খরচ করি ৭০ শতক জমিত গ্রানুলা জাতের আলু নাগাছনু। আলু হছলো ৬১ বস্তা (৮৪ কেজিতে ১ বস্তা)। মোর বড় ভাইয়ের পরামর্শ শুনি ওইবার বেশি টাকা লাভের আশায় মুই সেই আলু হিমাগারোত থুচনুং। আলুর দাম কমি যাওয়ায় মুই হিমাগার থাকি আলু তোলোং নাই। হিমাগার মালিক ওই আলু ৪ টাকা কেজি দরে বেচে ওমার ভাড়ার টাকা শোধ করি নিয়া মোক খালি ২ হাজার ৪৮০ টাকা দিছে। এই জন্য মুই এবার ৪০ শতক জমির ৪ হাজার ১০০ কেজি আলু জমিতে ১২ টাকা কেজি দরে বেচে দিছুং।’
ইকরচালী গ্রামের চাষি মিটু মিয়া বলেন, ‘তিন বছর আগোত হিমাগারোত আলু থুবার জায়গা না পেয়া এক একর জমিত ৯০ বস্তা আলু কম দামোত বেচে দিয়া লস খাছুং। এই জন্য রাগ হয়া তিন বছর থাকি আলুর আবাদ না করি তামাকের আবাদ করছুং। গত বছর অন্য মানুষ আলুর দাম পাওয়ায় মুইও এইবার তাংকু না নাগে লাভের আশাত ৯০ শতক জমিত শিলবিলাতি আলু গাড়ছুং। ফলনও ভালো হইচে। ওই আলু হিমাগারোত থুবার জন্য মোর পাছে পাছে হিমাগারের লোক ঘোরেছে। ঋণও দিবার চায়ছে।’
এ ব্যাপারে সিনহা হিমাগারের ব্যবস্থাপক দুলাল হোসেন বলেন, ‘আলুচাষিরা আগে হিমাগারে আলু রাখার জন্য হিমাগারে এসে স্লিপের জন্য ধরনা দিত। কিন্তু এবার আমাদেরই চাষিদের কাছে যেতে হচ্ছে। ঋণও আগাম দিতে হচ্ছে।’
ব্রাদার্স হিমাগারের ব্যবস্থাপক লোকমান হোসেন বলেন, ‘এবার চাষিদের হিমাগারে আলু রাখার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। আলু নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঋণও দেওয়া হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, গত বছরের শেষের দিকে আলুর দাম বেশি থাকায় এবারে অনেক চাষি তামাক ছেড়ে আলু চাষে ফিরেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম ভালো থাকায় অনেক চাষি খেতেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন।