আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে বালু তুলে প্রকল্পে বিক্রির অভিযোগ

ঢোলভাঙ্গা নদীতে বসানো আওয়ামী লীগ নেতার শ্যালোচালিত ইঞ্জিনের খননযন্ত্র। সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নে
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বালু তোলায় নদীতীরবর্তী ফসলি জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষকেরা বাধা দিলেও চেয়ারম্যান কাউকে পাত্তা দেননি। তিনি বালু তোলা অব্যাহত রেখেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিমের ভাষ্য, কৃষকদের বাধায় সরে গিয়ে এখন নিজের পতিত জমি থেকে বালু তুলছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) যেকোনো মূল্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি ভরাট করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদরের খোশকান্দি গ্রামের উত্তর পাশে ঢোলভাঙ্গা নদী। কয়েক দিন ধরে ওই নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহিম বালু তুলছেন। এসব বালু খোশকান্দি গ্রামের মধ্যপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা ভরাটের জন্য বিক্রি করছেন তিনি। প্রতি ফুট বালু চার টাকা দরে বিক্রি করছেন। কয়েক মাস আগেও নদীর ওই জায়গাটি খনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বর্তমানে শ্যালোচালিত ইঞ্জিনের খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলায় নদীতীরবর্তী ফসলি জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। একাধিক কৃষক বালু তুলতে নিষেধ করলেও কারও কথা আমলে নেননি আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি এখনো বালু তোলা অব্যাহত রেখেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খোশকান্দি গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সরু ঢোলভাঙ্গা নদী। ওই নদী থেকে বালু তুলে গ্রামের দক্ষিণ পাশে বাঞ্ছারামপুর-ফেরিঘাট সড়কের পাশে চুনারচড় মৌজার ৬৫ শতাংশ খাসজমি ভরাট করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অর্ধেকের মতো জায়গা ভরাট করা হয়েছে। ৬৫ শতাংশ জমি ৮ ফুট উচ্চতায় ভরাটের কাজ চলছে। ঢোলভাঙ্গা নদীর প্রস্থ অনেক কম হওয়ায় বালু তোলার কারণে ইতিমধ্যে নদীর দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

খোশকান্দির কান্দাপাড়ার কৃষক জামাল মিয়া বলেন, চেয়ারম্যানকে একাধিকবার বালু তোলা বন্ধ করতে বলেছেন। খননযন্ত্রের পাশেই তাঁর জমি। বালু তোলা বন্ধ না করলে তাঁর জমিটি যেকোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

খোশকান্দি গ্রামের প্রবীণ কৃষক শওকত আলী বলেন, কয়েক দিন আগে নদীটি খনন করা হয়। এতে নদীতীরে ভাঙন দেখা দেয়। তার ওপর এখন ড্রেজার দিয়ে বালু তোলায় নদীর দুই পাশে জমিগুলো ভেঙে যাবে। জমিতে ভাঙন দেখা দেবে বললেও চেয়ারম্যান কাউকে পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, এতে কৃষকদের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, বালু লাগবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার ঘনফুট। বালু তোলা শেষ পর্যায়ে। যে চর থেকে বালু তোলা হচ্ছে, সেটি তাঁর আড়াই কানি (প্রতি কানি ৩০ শতক) বোরো ধানের পতিত জমি। ২০ বছর ধরে সেখানে কিছু করতে পারছেন না।

কৃষকদের বাধার বিষয়ে আবদুর রহমান বলেন, ‘আসলে এটি নদী না, এটি খাল। প্রথমে অন্যদিকে ড্রেজার লাগাই। বাধা দিলে সেখান থেকে সরে এখন নিজের জমি থেকে বালু তুলছি।’ তিনি বলেন, প্রতি ঘনফুট বালুর জন্য উপজেলা প্রশাসন টাকা দেবে কি না, জানেন না। ইউএনও ও এসি ল্যান্ড স্যার আশ্রয়ণ প্রকল্পটি যেকোনো মূল্যে ভরাট করে দিতে বলেছেন।

ইউএনও এ কি মিত্র চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছে কোনো কৃষক অভিযোগ দেননি। তিনি এ ব্যাপারে কৃষকদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য মাটি ভরাটের একটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। এখন কোথা থেকে বালু তোলা হচ্ছে, সেটি তাঁর জানা নেই।

‘আপনার নির্দেশে নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলছেন ইউপি চেয়ারম্যান’— জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘আমার নির্দেশে হবে কেন? সেখানে খাস জায়গার মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৮টি ঘর হবে। মাটি ভরাটের জন্য প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। মাটি ভরাটের জন্য চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কারও অভিযোগ থাকলে আমাকে লিখিতভাবে দিতে বলেন।’