শরীয়তপুর সদর
আর্সেনিকযুক্ত পানিই ‘ভরসা’
পরীক্ষা করে অন্তত ২ হাজার ৫০০ নলকূপে উচ্চমাত্রার আর্সেনিক থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
গৃহবধূ রাবেয়া বেগমের বাড়ির নলকূপের পানিতে অতিমাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্বেচ্ছাসেবকেরা নলকূপটিতে লাল রং দিয়ে চিহ্ন দিয়েছেন। কিন্তু বিকল্প পানির উৎস না থাকায় ওই নলকূপের পানি পান করতে হচ্ছে পরিবারটিকে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের সুজন দোয়াল গ্রামে রাবেয়া বেগমের বাড়ি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে নলকূপের পানি ব্যবহার করছি। এখনো তেমন কোনো সমস্যায় পড়িনি। কয়েক দিন আগে পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। পানিতে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে, এমন কথা বলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মীরা লাল রং লাগিয়ে দিয়েছেন। পানি পাওয়ার অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ওই পানিই সাংসারিক কাজে ব্যবহার করছি। এখন কিছুটা ভয় লাগছে।’
শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। স্থানীয় পর্যায়ে পরীক্ষায় অন্তত ২ হাজার ৫০০ নলকূপে উচ্চমাত্রার আর্সেনিক থাকার তথ্য পেয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। আর্সেনিক রয়েছে, এমন নলকূপ লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ওই সব নলকূপের পানিই পান করছেন গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করার ফলে মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর শরীয়তপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, সদর উপজেলার ২৭ হাজার ৫০০ নলকূপের পানির আর্সেনিক পরীক্ষার কাজ চলছে। গত ২০ এপ্রিল এ পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকেরা পানি সংগ্রহ করছেন। আর্সেনিক ফিল্ড কিট টেস্টের মাধ্যমে পানিতে আর্সেনিক রয়েছে কি না, তা নির্ণয় করা হচ্ছে। পরীক্ষার ফলাফল লিখে তা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। যেসব নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোকে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ওই নলকূপের পানি ব্যবহার ও পান না করার জন্য বলা হচ্ছে।
পানিতে আর্সেনিকের স্বাভাবিক (সহনীয়) মাত্রা প্রতি লিটারে দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রাম। আর এ অঞ্চলে পাওয়া যাচ্ছে প্রতি লিটারে ৫ মিলিগ্রাম। যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
সদর উপজেলার সুজন দোয়াল গ্রামের সরদার বাড়িতে ২০টি পরিবারের বসবাস। ওই বাড়িতে তিনটি নলকূপ রয়েছে। সম্প্রতি পরীক্ষায় তিনটি নলকূপেই প্রতি লিটারে ৫ মিলিগ্রাম আর্সেনিক পাওয়া গেছে। তবে পরিবারগুলো ওই নলকূপের পানিই ব্যবহার করছে।
সম্প্রতি সুজন দোয়াল গ্রামে দিয়ে দেখা যায়, সরদার বাড়ির গৃহবধূ শেফালী আক্তার আর্সেনিক রয়েছে, এমন একটি নলকূপের পানি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম না বাড়ির সব নলকূপের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। পরীক্ষার পর বিষয়টি জেনেছি। জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ওই কলের পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। বিকল্প পানির ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে তা ব্যবহার করছি। জানি না এর ফলে কী হতে পারে।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন’ প্রকল্পের অধীন আর্সেনিক ফিল্ড কিট টেস্টের কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। প্রতিটি ইউনিয়নের ২ হাজার ৫০০ নলকূপে এ পরীক্ষা করা হবে। ওই কাজে যুক্ত রাহাত হোসেন নামের একজন বলেন, সদর উপজেলার গ্রামগুলোর বেশির ভাগ নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। বিপদ জেনেও অনেক পরিবার ওই পানি ব্যবহার করছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের শরীয়তপুর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ মন্ডল বলেন, সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আর্সেনিক ফিল্ড কিট টেস্ট করা হচ্ছে। ৫ হাজার ৯২৮টি পরীক্ষার ফলাফল হাতে এসেছে। তার মধ্যে ২ হাজার ৪৯৯টি নলকূপে আর্সেনিকের মাত্রা পাওয়া গেছে। যাঁদের নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে, তাঁদের ওই পানি ব্যবহার না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা আর্সেনিকযুক্ত পানি ব্যবহার করছেন, তাঁরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন।