লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে একজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলায় এ নিয়ে তিন দফায় মোট গ্রেপ্তার হলো ১৬ জন। এই ১৬ আসামিকেই আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। এর মধ্যে প্রথম দফায় গ্রেপ্তার পাঁচজনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। লালমনিরহাটের আমলি আদালত-৩-এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ আদেশ দেন।
গতকাল রাতে শেষ দফায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নুরুজ্জামান (২০), রশিদুল ইসলাম (১৬), বাপ্পি (১৭), জোবায়েদ হোসেন (১৬), আলাল হোসেন (৪৫) ও অহিদুল ইসলাম (২৮)। এই ছয় আসামি মধ্যে চারজনকে ইউনিয়ন পরিষদে হামলা ও ভাঙচুর এবং অপর দুই আসামিকে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় আজ বেলা দুইটার দিকে লালমনিরহাট আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এদিকে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পাঁচ আসামি হলেন লালমনিরহাটের পাটগ্রামের আউলিয়ার হাটের ইসমাইল হোসেনের দুই ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৩২) ও বায়েজিদ ইসলাম (২২), একই উপজেলার ইসলামপুর ডাঙাপাড়ার অলি হোসেনের ছেলে রফিক ইসলাম (১৯), উফারমারার সামসুদ্দিন ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৫) ও একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মাসুম আলী (৩২)।
প্রথম দফায় গ্রেপ্তার পাঁচজনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। লালমনিরহাটের আমলি আদালত-৩-এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ আদেশ দেন।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী জুয়েলের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলামের দায়েরকৃত হত্যা মামলার বিপরীতে আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপপরিদর্শক মাহমুদুন্নবী গত রোববার গ্রেপ্তারকৃত এই পাঁচ আসামিকে আদালতে সোপর্দ করেন। তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী আজ দুপুরে রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীসহ ১৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তদন্ত চলছে। জড়িত কেউ রেহাই পাবে না।
গত ২৯ অক্টোবর পাটগ্রামের বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ পড়েন রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী জুয়েল (৫০)। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রংপুর শহরের বাসিন্দা সুলতান রোবাইয়া সুমন। মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীর দেওয়া তথ্যমতে, শহীদুন্নবীকে গণপিটুনি দিয়ে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটক করে রাখা হয়। ঘটনাটি নিয়ে সন্ধ্যায় পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা শহীদুন্নবীকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ভাঙচুর করে বের করে এনে গণপিটুনি দেয় এবং স্থানীয় বাঁশকল এলাকায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় গত শনিবার নিহত ব্যক্তির চাচাতো ভাই সাইফুল আলম, পাটগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা করেন। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে ওই তিন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা। আলোচিত তিনটি মামলা জেলা ডিবি পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি লালমনিরহাট জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ইনচার্জ ওমর ফারুক সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে পাটগ্রাম থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলার বিপরীতে পুলিশ শনিবার পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে লালমনিরহাটের আদালতে সোপর্দ করে। এই পাঁচজনেরই আজ আদালতে রিমান্ড শুনানি হলো। এসব মামলার বিপরীতে দ্বিতীয় দফায় বুড়িমারী কেন্দ্রীয় মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীসহ আরও পাঁচজনকে পুলিশ গত রোববার রাতে আটক করেছে। তাঁদেরও আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। শেষ ১১ জনেরও রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে, যা এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীসহ ১৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তদন্ত চলছে। জড়িত কেউ রেহাই পাবে না।