রংপুরের কারমাইকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা প্রকট। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ছাত্রদের তিনটি আবাসিক ছাত্রাবাস সাড়ে আট বছর বন্ধ ছিল। সম্প্রতি দুটি খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে এই দুটি ছাত্রাবাসে আসনসংখ্যা মাত্র ১৯২। আর চালু থাকা তিনটি ছাত্রী নিবাসে আসনসংখ্যা ৪৪৩।
কলেজের মোট ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে জেলার বাইরের শিক্ষার্থী রয়েছে ১৮ হাজারেরও বেশি। ছাত্রাবাস না থাকায় জেলার বাইরের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে কলেজের বাইরে আবাসিক মেসে থেকে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। প্রায় নয় হাজার শিক্ষার্থী রংপুর নগর ও শহরের আশপাশ এলাকার মেসে থাকছেন।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এই কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ও ১৮টি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ বিভিন্ন কোর্সে শিক্ষার্থীর ২৭ হাজার। ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের কারণে ২০১১ সালের ৫ মার্চ কলেজ বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি তিনটি ছাত্রাবাস বন্ধ করা হয়েছিল। সেই থেকে দীর্ঘ সাড়ে আট বছর বন্ধ ছিল। এ তিনটি ছাত্রাবাস হলো: গোবিন্দলাল (জিএল), ওসমানী এবং কাশিমবাজার (কেবি) ছাত্রাবাস। এর মধ্যে জিএল ছাত্রাবাসে আসনসংখ্যা ১৪০, ওসমানী ছাত্রাবাসে ১৮৯ এবং কেবিতে ৫২। তবে এসব ছাত্রাবাসে নির্ধারিত আসনের পাঁচগুণের বেশি শিক্ষার্থী থাকত।
ছাত্রদের তিনটি ছাত্রাবাসের মধ্যে গোবিন্দলাল (জিএল) ও কাশিমবাজার (কেবি) ছাত্রাবাস পুনরায় চালু করা হয়েছে। বন্ধ থাকা ওসমানী ছাত্রাবাস চালু করার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়াও কলেজের তিনটি ছাত্রী নিবাসের মধ্যে জাহানারা ইমাম হলের আসনসংখ্যা ২০০, রোকেয়ায় ১৪৩, তাপসী রাবেয়ায় আসনসংখ্যা ১০০। মেয়েদের এ তিনটি হল বর্তমানে খোলা রয়েছে। ছাত্রদের জন্য ১২৫ আসনের শেখ কামাল হল ও মেয়েদের জন্য ১২৫ আসনের বেগম ফজিলাতুন্নেছা হল নির্মাণাধীন রয়েছে।
বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা না থাকায় কলেজের আশপাশে তিন শতাধিক আবাসিক মেস গড়ে উঠেছে। এসব মেসের একটি ছোট কক্ষে তিন থেকে চারটি চৌকি বিছিয়ে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের থাকতে হয়। প্রতি সিটের ভাড়া মাসে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। কেউ একাই একটি কক্ষ নিতে চাইলে ভাড়া পড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।
হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র আলমগীর হোসেন বলেন, ব্রিটিশ আমলের ছাত্রাবাসগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসে অনেক জায়গা থাকা সত্ত্বেও হলের সংখ্যা অপর্যাপ্ত।
ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বহুবার নতুন হল নির্মাণের দাবি জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় ছাত্রসমাজের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, বড় এ ক্যাম্পাসে বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিলেই শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল গড়ে উঠতে পারে। এ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি প্রায়ই জানানো হয়ে থাকে।
কলেজের অধ্যক্ষ শেখ আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অল্প কিছুদিন হলো অধ্যক্ষের দায়িত্বে নিয়েছি। বন্ধ ছাত্রাবাসগুলো পড়ে থাকতে থাকতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে দুটি ছাত্রাবাস সংস্কার করে চালু করা হয়েছে। ছাত্রদের জন্য একটি ও ছাত্রীদের জন্য একটি পাঁচ তলা হল নির্মাণের কাজ চলেছে। দুটি হলের প্রত্যেকটিতে ১২৫টি করে আসন থাকছে।’