দীর্ঘ ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকৃত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি রাষ্ট্র। ঘটনার পর নামমাত্র কিছু সহায়তা পেলেও নিহত শ্রমিকের পরিবার ও আহত শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ তাঁদের খোঁজ নেয়নি।
বুধবার সকালে সাভারের আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ৯ বছর পূর্তিতে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন বিভিন্ন সংগঠনের শ্রমিকনেতারা।
নেতারা বলেন, ‘বিভিন্ন ঘটনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, শ্রমিকের লাশের বিনিময়ে হলেও মুনাফা করতে চাচ্ছে মালিকপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষ কোনো ঘটনার বিচার করতে ব্যর্থ হলে সে ধরনের ঘটনা বারবার ঘটে। ৯ বছর পার করার পর এখনো আমাদের দাবি করতে হচ্ছে ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের।’
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মিন্টু বলেন, গার্মেন্টস–মালিকপক্ষ সব সময়ই শ্রমিকবান্ধব বলে নিজেদের দাবি করে। যে শ্রমিকের ঘামে তারা মুনাফা অর্জন করে, সেই শ্রমিকের অসহায়ত্বের সময় মালিকপক্ষ কোনো খোঁজই নেয় না। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ঘটনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, শ্রমিকের লাশের বিনিময়ে হলেও মুনাফা অর্জন করতে চায় মালিকপক্ষ।’
আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনসের পুড়ে যাওয়া পরিত্যক্ত ভবনটির মূল ফটকের সামনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মী ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় স্বজন হারানো পরিবারের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তাঁরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন, নিরাপদ কারখানা ও কর্মস্থল নিশ্চিত করার দাবি জানান।
ফটকের সামনে শ্রদ্ধা জানাতে এসে বারবার চোখের পানি মুছছিলেন মৌসুমি আক্তার। অগ্নিকাণ্ডে বোন আছমা আক্তারকে হারিয়েছেন তিনি। পেছনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবা মধু মিয়া।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বোনটাকে হারাইছি। কিন্তু আজও বিচার পেলাম না। অপরাধীদের ফাঁসি হলে আমার বোনের আত্মাটা শান্তি পেত।’
আহত শ্রমিক নাসিমা আক্তার বলেন, ‘পঙ্গুত্ব বরণ করে আমরা আজ অসহায়। করোনার সময়ও আমাদের কেউ খোঁজ নেয়নি। রোহিঙ্গারা থাকার ঘর পায়, সহায়তা পায়, কিন্তু আমরা পাই না। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।’
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, তাজরীনের ঘটনায় অনেক শ্রমিক স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে। তাঁদের ক্ষমতা নেই কাজ করে জীবন চালানোর। তাঁদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাজরীনের ঘটনায় বিচার না হওয়ার ফল রানা প্লাজার দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, তাজরীনের পরিত্যক্ত ভবন ও রানা প্লাজার খালি অংশে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১১১ জন পোশাকশ্রমিক। শতাধিক শ্রমিক আহত হন। তবে ঘটনার পর ৯ বছর ধরে নিশ্চিন্তপুরে কারখানাটির সামনে অবস্থান নিয়ে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি করে আসছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।