কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস আজ ১৮ সেপ্টেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১২৭ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
তবে স্থানীয় লোকজন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এ হত্যাযজ্ঞের ঘটনাটি অনেকে জানেন না। এ হত্যাযজ্ঞে শহীদদের নাম সরকারিভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। তাঁরা এ গণহত্যার সরকারি স্বীকৃতি চান।
তবে শহীদদের স্মরণে গ্রামবাসী আজ নানা কর্মসূচি পালন করবেন। দিবসটি উপলক্ষে আজ শনিবার কৃষ্ণপুর গ্রামে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিস্তম্ভে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১০টায় হবে আলোচনা সভা। সবশেষে রয়েছে সংগীতানুষ্ঠান।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ছিল মহালয়া। এ উপলক্ষে আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক শ মানুষ জড়ো হন কৃষ্ণপুর গ্রামে। কিন্তু তাঁরা আর মহালয়া পালন করতে পারেননি। ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর পাঁচটার দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের দোসর রাজাকারদের সহায়তায় কৃষ্ণপুর গ্রামে হানা দেয়। এ সময় একসঙ্গে ১২৭ জন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৪৫ জনই ছিলেন কৃষ্ণপুর গ্রামের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সেদিন খুব ভোরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী স্পিডবোট নিয়ে গ্রামটিতে প্রবেশ করে। তারা গ্রামটি ঘিরে ফেলে। এরপর লোকজনকে ধরে এনে লাইন ধরিয়ে দাঁড় করে রাখে। একপর্যায়ে নির্বিচার গুলি করে হত্যা করে তাঁদের। আবার অনেককে পানিতে ফেলে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। ভোর ৫টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে এ হত্যাযজ্ঞ। পরে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া লোকজন সারি সারি লাশ ভাসিয়ে দেন পাশের বলভদ্র নদে।
হত্যাযজ্ঞের প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রকৌশলী প্রদীপ কান্তি রায় বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এ হত্যাযজ্ঞের খবর অনেকে জানেন না। তাঁদের পরিচিতিও জাতীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে তাঁরা নিজেদের অর্থায়নে শহীদদের স্মরণে গ্রামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছেন। সেখানে কৃষ্ণপুর গ্রামের ৪৫ জনের তালিকা রয়েছে।
ইউএনও লুসিকান্ত হাজরা বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রতিবছর এ দিবসে স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ ঘটনা ও শহীদদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সে দাবিগুলো জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।