আগুনে পুড়ে গেল অর্থ পাচার মামলায় জব্দ বরকত-রুবেলের ১২ বাস

ফরিদপুরে আগুনে পুড়ে গেল পুলিশের জব্দ করা বরকত- রুবেলের মালিকানাধীন ১২টি বাস। শনিবার সকালে শহরের পশ্চিম গোয়ালচামট এলাকা থেকে তোলাছবি: প্রথম আলো

আগুনে পুড়ে গেছে দুই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলায় গ্রেপ্তার ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলের মালিকানাধীন সাউথ লাইন পরিবহনের ১২টি বাস। অর্থ পাচার মামলায় আদালতের মাধ্যমে মোট ২২টি বাস আলামত হিসেবে জব্দ করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বাসগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল জেলা পুলিশের।

বাসগুলো শহরের গোয়ালচামট ওজোপাডিকো কার্যালয়ের সামনে পশ্চিম গোয়ালচামট মহল্লার একটি জায়গায় রাখা ছিল। বাসগুলোর মধ্যে ১০টি শেড দিয়ে ঘেরা জায়গায় ছিল। আর ১২টি বাস ওই জায়গার পাশে নিচু জমিতে রাখা ছিল।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নিচু জমিতে সামনে ছয়টি ও পেছনে ছয়টি বাস রাখা ছিল। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে ১২টি বাসের সামনের সারির একটি বাসে আগুন জ্বলে উঠতে দেখা যায়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন অন্য বাসে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় রাত আড়াইটার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। তবে ততক্ষণে ১২টি বাস পুড়ে যায়।
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান, একসঙ্গে ১২টি বাস জ্বলছে।

বাসগুলো অর্থ পাচার মামলায় গ্রেপ্তার শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তাঁর ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের মালিকানাধীন।

২০২০ সালের ১৬ মে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১৮ মে মামলা করেন সুবল সাহা। এ ঘটনার জের ধরে ২০২০ সালের ৭ জুন পুলিশের বিশেষ অভিযানে বরকত-রুবেল গ্রেপ্তার হন। ২৬ জুন বরকত-রুবেলের নামে ঢাকার কাফরুল থানায় দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করে সিআইডি।

ফরিদপুরে আগুনে পুড়ে গেল পুলিশের জব্দ করা বরকত-রুবেলের মালিকানাধীন ১২টি বাস
ছবি: প্রথম আলো

আগুনে ১২টি বাস পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় বরকতের স্ত্রী সুরাইয়া পারভীন বলেন, ‘গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের বাসসহ মোট ৫৫টি গাড়ি আদালতের নির্দেশে সিআইডি জব্দ করে। এর মধ্যে ১২টি বাস ফরিদপুরের গোয়ালচামট বিদ্যুৎ অফিসের সামনে একটি শেডের নিচে রাখা ছিল।’ তাঁর অভিযোগ, ‘১৫ থেকে ২০ দিন আগে মিজানুর রহমান চৌধুরী আমাদের জব্দকৃত গাড়ি রাখার ২০ লাখ টাকার শেডটি বিক্রি করে দেন। তারপর সেখান থেকে গাড়িগুলো দূরে অনিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখা হয়। এরপর এই আগুনের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমরা আদালতে যাব।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শহরের ওয়্যারলেসপাড়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, তিনি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তবে আগুন লাগার খবর শুনে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তাঁর ধারণা, ওই বাসের ভেতরে স্থানীয় তরুণেরা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সেবন করতেন, তাঁদের কারণে আগুন লেগে যাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তিনি দাবি করেন, বাসগুলো রাখা হয়েছিল তাঁর মালিকানাধীন জায়গায়। ১৫ দিন আগে তিনি পুলিশের সঙ্গে আলাপ করে বাসের শেডটি সরিয়ে ফেলেন।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জামাল পাশা বলেন, বাসগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ খবর পাওয়ামাত্রই ফায়ার সার্ভিসকে জানিয়েছে। কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তা জানা যায়নি। তবে পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি মামলা করবে।