নকলা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শাহ মো. বোরহান উদ্দিন বিজয়ী হয়েছেন। পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ। মনোনয়ন যথাযথ না হওয়ায় এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রশাসনের কঠোর মনোভাবের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন বলে দলীয় ও স্থানীয় সূত্রগুলো মনে করছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী বোরহান উদ্দিন পেয়েছেন ২৯ হাজার ৮৩৯ ভোট। তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ২৪ হাজার ৮৮৩ ভোট। দুজনের ভোটের ব্যবধান ৪ হাজার ৯৫৬। নির্বাচনে তাঁদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে—এমন আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। কোনো সহিংস ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তবে নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে নকলা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত শাহ মো. মোজাম্মেল হক মাস্টারের ছেলে বোরহান উদ্দিন। ২০০৯ সালে তিনি নকলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে বিএনপির প্রয়াত নেতা মাহবুবুল হক চৌধুরীর কাছে তিনি পরাজিত হন। ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও কারচুপির অভিযোগে ওই নির্বাচন বর্জন করেন তিনি। পরপর তিনবার নির্বাচন করার সুবাদে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর পরিচিতি ও যোগাযোগ রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপরই বোরহান উদ্দিন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন ও গণসংযোগ শুরু করেন। তবে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও তিনি ব্যর্থ হন। তবু হাল ছাড়েননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন এবং সম্মানজনক ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
>২০০১ সালে মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে শফিকুলের নির্বাচন করার বিষয়টি মানুষ ভুলতে পারেনি বলে দলটির অনেক নেতার দাবি।
নৌকার প্রার্থী শফিকুল ইসলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ৪৯ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ১৮ বছর কারাভোগ করেছেন। এর মধ্যে ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সশস্ত্র প্রতিবাদ করায় তিনি আট বছর কারাগারে ছিলেন। তবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে ২০০১ সালে তিনি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে মতিয়া পরাজিত হন। মতিয়ার পরাজয়ের জন্য নকলা উপজেলাবাসী শফিকুলকেই দায়ী করে থাকেন। কারণ, মতিয়ার পরাজয়ের পর তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও নকলা উপজেলার সাধারণ জনগণের ওপর সীমাহীন নির্যাতন চালান। তাঁরা অনেক মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেন এবং অনেককে ঘরছাড়া করেন।
সাধারণ মানুষের ধারণা, মতিয়া চৌধুরী পরাজিত না হলে ওই সময় জোট সরকারের লোকজন নকলাবাসীর এত ক্ষতি করতে পারতেন না। এ কারণে সাধারণ ভোটাররা এবার শফিকুলের মনোনয়নকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেননি। ফলে আওয়ামী লীগ করেন এমন অনেক ভোটারই কেন্দ্রে ভোট দিতে যাননি।
উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম মাহবুবুল আলম বলেন, পরাজয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন যথাযথ হয়নি। জনগণের সঙ্গে প্রার্থীর তেমন সম্পৃক্ততা ছিল না। তা ছাড়া ২০০১ সালে মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে শফিকুলের নির্বাচন করার বিষয়টি মানুষ ভুলতে পারেনি। ফলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনেক ভোটারের সহানুভূতি তিনি পাননি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল বলেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব, এটি প্রমাণিত হয়েছে। জনগণ যাঁকে যোগ্য মনে করেছে, তাঁকেই নির্বাচিত করেছে। তিনি বলেন, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।