বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ও ইউএনও বাদী হয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই তথ্য জানান।
ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, মামলায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৩০ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ ওরফে বাবু, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে ফিরোজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি অলিউল্লাহ অলি প্রমুখ।
এদিকে আজ বেলা ১১টার দিকে নগরের কালীবাড়ি সড়কে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাড়ির সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা অবস্থান নেন। এ সময় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বাড়িতে ছিলেন। সেখানে ছিলেন জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা। তবে সেখান থেকে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ সদস্যরা চলে গেলেও র্যাবের একটি দল সেখানে অবস্থান করছিল। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস মেয়রের বাড়িতে ঢুকতে চাইলেও তিনি ঢুকতে পারেননি। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুলিশি নির্যাতনের নিন্দা জানাচ্ছি।’
মেয়রের বাড়ির সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিতির বিষয়ে ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর ছিল গতকাল বুধবার রাতের ঘটনায় জড়িত আসামিরা এখানে অবস্থান করছেন। এ খবর পাওয়ার পর তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে কাউকে না পাওয়ায় পুলিশ চলে আসে।’
বরিশাল সদরের ইউএনও মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে গতকাল বুধবার রাতে হামলার ঘটনা ঘটে। গতকাল রাতে দুই দফায় জেলা ছাত্রলীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী ইউএনওর বাসভবনে হামলা চালান বলে অভিযোগ ইউএনওর। হামলায় ইউএনওর বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হন। ছাত্রলীগের দাবি, এ সময় তাদের অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে উপজেলা পরিষদ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার শুভেচ্ছা ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করেন। এ সময় ইউএনওর কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাঁদের পরিচয় জানতে চান। এর পর তাঁরা সকালে এসে কাজ করার জন্য বলেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
খবর পেয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান আহেমদ ওরফে বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহসভাপতি আতিকুল্লাহ খান মুনিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব খান, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতসহ শতাধিক নেতা-কর্মী সেখানে যান। পরে সেখানে আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
ইউএনও মুনিবু্র রহমান অভিযোগ করেন, ‘উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার ও পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসেন। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাদের সকালে আসতে বলা হয়। এ কারণে তাঁরা আমাকে গালিগালাজ করে। আমার বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালান।’
ঘটনার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এরপর তাঁরা পুলিশের ওপরও চড়াও হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। করা হয় লাঠিপেটা। সংঘর্ষে আবু বকর ও শরিফুল নামের দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইউএনওর সরকারি বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্য ফারুক হোসেন ও নাসির উদ্দিন নামের দুজন আহত হয়েছেন। তাঁদের সবাইকে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বুধবার রাতের ঘটনার প্রতিবাদে আজ ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়।