টাঙ্গাইলে তপন রবি দাস নামের এক ব্যক্তিকে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খান (রানা)। আজ সোমবার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগটিকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার এই আসামি।
একই দিন টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে আমানুর রহমানের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন প্রয়াত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ। তিনি আমানুরকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন।
১ জুন শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা তপন রবি দাস প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ৩১ মে সকালে শহরের কলেজপাড়া এলাকায় আমানুর তাঁর বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তপন সদর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমানুর তাঁর বক্তব্য জানাতে সোমবার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। এদিকে নাহার আহমেদের পক্ষ থেকে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন এবং প্রেসক্লাবের সামনে ফারুক হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় আমানুরকে বেলা ১১টায় এবং নাহার আহমেদকে দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের সময় দেয় প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ। পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন নিয়ে শহরে উত্তেজনা দেখা দিলে সকাল থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রেসক্লাব ও আশপাশের এলাকায় লোকজন সমবেত হতে বাধা দেয় পুলিশ।
আওয়ামী লীগের নতুন হাইব্রিডরা তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি শুরু করেছে। তপন রবি দাসকে দিয়ে তাঁর (আমানুর) বিরুদ্ধে অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে আমানুর প্রায় ২০ জন সঙ্গী নিয়ে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি সংবাদ সম্মেলন শেষ করে চলে যাওয়ার পর নাহার আহমেদ তাঁর সমর্থক ১০–১২ জনকে সঙ্গে নিয়ে প্রেসক্লাবে এসে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
আমানুর রহমান খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলকভাবে তাঁকে ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এই মামলায় তাঁকে দীর্ঘ ৩৪ মাস ২১ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নতুন হাইব্রিডরা তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি শুরু করেছে। তপন রবি দাসকে দিয়ে তাঁর (আমানুর) বিরুদ্ধে অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃতপক্ষে তপন রবি দাস নামের কোনো ছেলেকে তিনি চেনেন না, কখনো দেখেননি। তিনি সাংসদ তানভীর হাসান ছোট মনির, তাঁর ভাই গোলাম কিবরিয়া বড় মনি এবং টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, লুট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির অভিযোগ আনেন।
টাঙ্গাইলের সব শ্রেণির মানুষের রুখে দাঁড়ানোর মাধ্যমে ফারুক আহমেদের হত্যাকারী খান পরিবারের লোকজন আইনের হাতে ধৃত হন। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও বিচার না হওয়ায় সেই সন্ত্রাসী ও খুনিদের মদদে আবার টাঙ্গাইল অশান্তির নগরীতে রূপ নিচ্ছে।
এ সময় আমানুরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন, আনেহলা ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার মো. শাহজাহান, দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাইন উদ্দিন তালুকদার, লোকেরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শরিফ হোসেন, জেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি আব্বাস আলী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসতিয়াক আহমেদ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন শেষ করে আমানুর শহরের কলেজপাড়া এলাকায় তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
এদিকে একই স্থানে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাহার আহমেদ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে হত্যার মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইলে ঘোর অমানিশা দেখা দেয়। টাঙ্গাইলের সব শ্রেণির মানুষের রুখে দাঁড়ানোর মাধ্যমে ফারুক আহমেদের হত্যাকারী খান পরিবারের লোকজন আইনের হাতে ধৃত হন। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও বিচার না হওয়ায় সেই সন্ত্রাসী ও খুনিদের মদদে আবার টাঙ্গাইল অশান্তির নগরীতে রূপ নিচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, তপন রবি দাসকে আমানুর পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অভিযোগ করা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। খান পরিবারের বড় ছেলে আমানুর রহমান খানের নেতৃত্বে টাঙ্গাইলে আবার অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু হয়েছে। তিনি আমানুরের জামিন বাতিল করে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এ সময় নাহার আহমেদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া, টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদ ও আমিনুর রহমান, শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিকদার মানিক, ফারুক আহমেদের মেয়ে ফারজানা আহমেদ, জামাতা ইমরান হোসেন প্রমুখ।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে এ হত্যার সঙ্গে তৎকালীন সাংসদ আমানুর রহমান খান ও তাঁর অপর তিন ভাইয়ের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর তাঁরা আত্মগোপন করেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই বছর সেপ্টেম্বরে মামলার প্রধান আসামি আমানুর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। প্রায় তিন বছর হাজতে থাকার পর তিনি জামিন পান। তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ছয় বছর পলাতক থাকার পর গত বছরের ২ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি জেলহাজতে রয়েছেন। অপর দুই ভাই ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা পলাতক।