৩ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি। দৃশ্যপট ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাসস্ট্যান্ড। এক মাসের ব্যবধানে ওই স্থানে তিনটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে একটি বাসের চালক অগ্নিদগ্ধ হয়ে পুড়ে মারা যান। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তিনটি যাত্রীবাহী বাসে আগুনের ঘটনায় পরিবহনসংশ্লিষ্টদের মনে ভীতি পেয়ে বসেছে।
বিশেষ করে এখনো কোনো একটি ঘটনার ক্লু উদ্ধার না হওয়া এবং সবগুলো ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা ভেবে গুরুত্ব না দেওয়ায় বিষয়টি পরিবহনসংশ্লিষ্টদের ভাবাচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাসস্ট্যান্ডে ইকনো পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগার পর পরিবহন মালিক–শ্রমিকদের মনে নতুন করে ভীতি ছড়ায়।
জালাল আহমেদ ভৈরব বাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। বাসে ঘন ঘন আগুনের ঘটনায় তাঁর দুচিন্তার শেষ নেই। তিনি বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দূরত্ব আড়াই শ কিলোমিটারের ওপরে। প্রতিদিন কয়েক হাজার যান এই সড়ক দিয়ে আসা–যাওয়া করে। আর কোথাও আগুন লাগে না। কেবল ভৈরব বাসস্ট্যান্ডের এক শ গজের মধ্যে পরপর ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে ভাবার সুযোগ রয়েছে। গুরুত্ব না দেওয়া হলে এর জন্য একদিন চরম মূল্য দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম আগুনের ঘটনা ঘটে ৩ জানুয়ারি। ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসা অনন্যা পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে আগুন লাগে। আগুনে বাসটির বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। যাত্রীরা দরজা–জানালা দিয়ে লাফিয়ে নিচে পড়ে যেতে পারায় কেউ হতাহত হয়নি। এ ঘটনায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, সিগারেটের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনায় বাসটির মালিকপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি।
পরের দুর্ঘটনাটি ঘটে আট দিন পর ১২ জানুয়ারি ভোরে। ভৈরব-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী বিসমিল্লাহ পরিবহনের একটি বাস বাসস্ট্যান্ডে থেমে ছিল। ভেতরে চালক আবুল হোসেন (৫৮) ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুনে বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। একই সঙ্গে পুড়ে যান চালকও। ফায়ার সার্ভিস থেকে এই আগুনের দায় চাপানো হয় কয়েলের ওপর।
তবে ঘটনাটিকে নিছক দুর্ঘটনা মানতে নারাজ বাসটির মালিক ও নিহত চালকের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে কোনো একটি চক্র বাসটিতে আগুন দিয়ে থাকতে পারে।
আবুল হোসেনের ভাগনে নাহিদ মিয়া। তিনিও এই পেশায় আছেন ৩০ বছর ধরে। তিনি বলেন, পুলিশ ঘটনাটি দুর্ঘটনা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে চাচ্ছে না। অথচ অনুসন্ধান করলে ভিন্ন কিছু বের হয়ে আসতে পারে। একই ধারণার কথা জানালেন, বাসটির মালিক তৌহিদুর রহমানও। তিনি বলেন, বাসটি যে জায়গায় পার্কিং করা ছিল, বিপরীতে কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ওই সব প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরায় ধারণ হওয়া ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঘটনার কয়েক মিনিট আগে কয়েকজন বাসটির কাছাকাছি অবস্থান করছেন। পরে তাঁদের বাসের ভেতরেও যেতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার আগুনে পুড়ে যাওয়া বাসটি ইকনো পরিবহনের। বাসটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মহাখালী হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে। ওই দিন সন্ধ্যায় বাসটি যাত্রী নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে থামে। কয়েকজন যাত্রী ওঠার পর বাসটি ছেড়ে যায়। এই সময় আগুন জ্বলে ওঠে। পরে দ্রুত সব যাত্রী বাস থেকে নেমে যায়। আগুনে বাসটির ৪০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চালক স্বাধীন সরকার বলেন, ‘আগুন ধরেছে পেছনের সিটে। ওই সিটে যাত্রী ছিল না। আমি লুকিং গ্লাস দিয়ে প্রথমে দেখতে পাই।’
মোজাম্মেল হোসেন ভৈরব হাইওয়ে থানায় সদ্য যোগ দেওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি সিগারেটের আগুন থেকে হতে পারে। তবে ঘন ঘন কেন ভৈরবে এমনটা ঘটছে, এ নিয়ে থানা–পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। এর সঙ্গে নাশকতার সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা ভাবনায় রাখা হয়েছে।’
ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলী মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, প্রতিটি দুর্ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা আছে। তবে এসব ঘটনার অগ্রগতি ওই পর্যন্তই।