ধূমপানের অভিযোগে ছাত্রীদের ‘শাসন’, আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের মামলা

কুষ্টিয়া জেলার মানচিত্র

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় ধূমপানের অভিযোগে মাধ্যমিক বিদ্যালয়পড়ুয়া কয়েকজন ছাত্রীকে ‘শাসন’ করেছিলেন শিক্ষকেরা। তাদের মধ্যে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গত বুধবার থানায় মামলা করে তার পরিবার।

ওই ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, শিক্ষকেরা ধূমপানের মিথ্যা অভিযোগ তুলে ছাত্রীদের মানসিক নির্যাতন করেছেন। সেই নির্যাতন সইতে না পেরে সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে। তবে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকেরা দাবি করছেন, মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ পাওয়ায় তাঁরা ওই ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেন। কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করেননি।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে মামলার পর অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

গত সোমবার বিকেলে বিদ্যালয়ের ছাদে ধূমপানের অভিযোগ ওঠে ছয় ছাত্রীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ করা হয়, স্মার্টফোনে ধূমপানের দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেন বিদ্যালয়টির দুজন শিক্ষক ও একজন আয়া। ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদের মারধর করে ব্যাগ কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর টিসি (বদলির সনদ) ও অভিভাবকদের জানানোর ভয় দেখানো হয়। সেই অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী। আরেক ছাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার মানববন্ধন করেন মারা যাওয়া ছাত্রীর স্বজন ও এলাকাবাসী। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহানুভূতি জানাতে সেখানে গেলে তাঁকে মারধর করা হয়। তিনি বর্তমানে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মামলার আসামিরা হলেন বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক মো. মশিউর রহমান (৪৫), কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক ওয়ালিউর রহমান (৫০), মাহবুবা রহমান (৪০) এবং আয়া শিউলি খাতুন (৪২)। তাঁদের মধ্যে মশিউর ও ওয়ালিউরের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি। মশিউর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর ওয়ালিউর কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং একই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হামিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকেরা খুবই ভালো। তাঁরা ছাত্রীদের হয়তো শাসন করেছেন। তবে কোনো ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে পারেন না। বিদ্যালয়টির সভাপতি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম।

শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ হাজার ২৩০ জন। তাঁদের মধ্যে সোমবারের ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। বৃহস্পতিবার ৩০০ শিক্ষার্থী স্কুলে এসেছিল।

দুটি তদন্ত কমিটি

ধূমপানের অভিযোগে শাসন এবং ছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’র ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই কমিটির এক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, কাজ চলছে। প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটন করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। সঙ্গে কিছু সুপারিশ জানানো হবে।

অন্যদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে প্রধান করে সাত সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই কমিটি কাজ করছে বলে জানা গেছে।