শিবপুরে উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরেই পেটে ছুরি ধরে অপহরণ
নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের ভেতরে অপেক্ষমাণ মাইক্রোবাসচালককে পেটে ছুরি ধরে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য। পরে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে অপহরণ করে অন্য স্থানে নিয়ে আরও ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চায় তারা। কাকুতি-মিনতি করে বিকাশে আরও ২ হাজার টাকা এনে দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। ছেড়ে দেওয়ার আগে ‘কোনো অভিযোগ নেই’ মর্মে তাঁর বক্তব্য ভিডিও করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা কমপ্লেক্সের পুকুরপাড়ে পেটে ছুরি ধরে ওই মাইক্রোবাসচালকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে অপহরণ করে উপজেলার জাল্লারা বাজার এলাকার ছয়মায়া বনে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। বিকাশে আরও দুই হাজার টাকা আনিয়ে দেওয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছাড়া পান তিনি।
ঘটনার শিকার ওই মাইক্রোবাসচালকের নাম মো. রিফাত ভূঁইয়া (২১)। তিনি উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের কাজীরচর গ্রামের মৃত বাছিরুল আলম ভূঁইয়ার ছেলে। শিবপুর মাইক্রোস্ট্যান্ডের সিরাজ মিয়া নামের একজন মালিকের মাইক্রোবাস চালান তিনি।
উপজেলা কমপ্লেক্সের সিসিটিভি ফুটেজে রিফাতের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া ও তাকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে অপহরণের চিত্র ধরা পড়েছে। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের যে দুই সদস্য এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ থেকে তাদের একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার নাম মোকাররম (২৫)। সঙ্গে থাকা অপরজনকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।
ভুক্তভোগী রিফাত মিয়ার ভাষ্য, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের আবেদন করতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ভিড় থাকায় কিছুটা দেরি হবে ভেবে তিনি ইউএনওর কার্যালয়ের ভেতরে অডিটরিয়াম–সংলগ্ন পুকুরপাড়ের বেঞ্চে বসে ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে চেপে অপরিচিত দুজন তরুণ তাঁর সামনে আসেন। তারা জানতে চান, তোর বাড়ি কই? দুলালপুর বলার সঙ্গে সঙ্গেই একজন বলেন, তুই তো আমাকে মারছিলি। প্রতিবাদ করলে তাঁরা বলেন, মোটরসাইকেল ওঠ। আপনাদের মোটরসাইকেলে আমি কেন উঠব বলার পর একজন ছুরি বের করে আমার পেটে ধরে বলেন, তোর পকেটে কী আছে, বের কর। ওই সময় জোর করে আমার পকেট হাতিয়ে মালিককে আমদানি দেওয়ার জন্য রাখা ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন তাঁরা। পরে পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমাকে তাঁদের মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে চলতে শুরু করেন।’
রিফাত মিয়া আরও বলেন, ‘মোটরসাইকেলটি জাল্লারা বাজার এলাকার ছয়মায়া বনের একটি নির্জন স্থানে গিয়ে থামে। আমাকে নামিয়ে তাঁরা বলেন, কার কাছে ফোন দিবি দে, ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বল, না হলে তোকে মেরে ফেলব। আমাকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি-চড় মারেন তাঁরা। তখন কান্নাকাটি করে তাঁদের বলি, আমি গরিব মানুষ, অন্যের মাইক্রোবাস চালাই, এতগুলো টাকা কোথায় পাব? তাঁরা বলেন, পরিচিতদের ফোন দে, বিকাশে টাকা চা। আমি কয়েকজনকে কল দিয়ে টাকা চেয়েছি, তারা দিতে পারেনি। তবে একজন আমার নম্বরে দুই হাজার টাকা বিকাশ করে। ওই টাকা আমার ফোন থেকে তাদের একজনের ফোনে পাঠাই। আর টাকা এনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই বুঝতে পেরে তাঁরা আমাকে ছেড়ে দেন। এর আগে তাঁরা আমার পকেটে ইয়াবা ছিল, আমি মেয়ে নিয়ে ধরা খাইছি—এসব বলতে বাধ্য করে ভিডিও করে।’
শিবপুর মাইক্রোস্ট্যান্ডের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন খান জানান, ‘বেলা একটার দিকে রিফাত স্ট্যান্ডে এসে আমাদের কাছে কান্নাকাটি করে সব ঘটনা খুলে বলে। স্ট্যান্ডের ২৫-৩০ জন চালক-শ্রমিক মিলে ইউএনওর কাছে যাই। তিনি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনার সত্যতা পান। এর পরই থানার ওসিকে কল দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এ ঘটনায় জড়িত দুই কিশোর গ্যাং সদস্যের বিচার চাই আমরা।’
জানতে চাইলে শিবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. ‘সজীব জানান, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। জড়িত দুজনের মধ্যে একজনের নাম মোকাররম বলে নিশ্চিত হয়েছি, অপরজনকে শনাক্ত করা যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সার্কেল এসপি ও থানার ওসিকে বলেছি। ভুক্তভোগীকে থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি।’
এ বিষয়ে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, ‘এ ঘটনায় শনাক্ত হওয়া মোকাররমের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি আমরা। সে পলাতক, তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বারটিও বন্ধ। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। এ ছাড়া জড়িত অপরজনকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’