ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শন করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

যশোরের ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শন শেষে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে কথা বলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রোববার দুপুরে অভয়নগর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

যশোরের ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শন করে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ রোববার তিনি অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।

দুপুরে ভবদহ ২১ ভেন্ট (দ্বার) স্লুইসগেটের পাশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের কাজটা যাতে তাঁরা স্থায়ীভাবে করতে পারেন, সেটাই তাঁদের উদ্দেশ্য। স্থায়ী সমাধানে যেতে হলে কিছু মানুষ বিরোধিতা করবেন। কিছু ঘেরমালিক বিরোধিতা করবেন, জমির মালিক বিরোধিতা করবেন, যাঁরা নদী দখল করে আছেন, তাঁরা বিরোধিতা করবেন, তাঁদের সঙ্গে তাঁরা বসবেন। তাঁদের বোঝাবেন, ১০ হাজার মানুষের চেয়ে ১০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই সেই কাজ তাঁদের করতে হবে।

এর আগে সকালে যশোরে আসেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সেখান থেকে তিনি অভয়নগর উপজেলার আমডাঙ্গা এলাকায় আমডাঙ্গা খাল পরিদর্শন করেন। এরপর উপজেলার সুন্দলী জলাবদ্ধতা এলাকা পরিদর্শন শেষে বেলা আড়াইটার দিকে ভবানীপুর গ্রামের শ্রী নদীর ওপর অবস্থিত ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটে আসেন। স্লুইসগেটটি ঘুরে দেখার পর উপস্থিত কয়েক শ জলাবদ্ধ নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ভবদহে জলাবদ্ধতার অবস্থাটা দিন দিন আসলে খারাপ হয়ে গেছে। যেহেতু সমস্যার সমাধান সময়মতো হয়নি, সেহেতু সমস্যাটা আরও বেশি গাঢ় হয়ে গেছে। আজ সকাল থেকে ঘুরে ঘুরে যেটা শুনলাম সেটা হচ্ছে, আপনাদের আমডাঙ্গা খালের প্রবাহ বাড়াতে হবে। আপনাদের নদ-নদীগুলো হরি নদ, ভৈরব নদ, মুক্তেশ্বরী নদী ড্রেজিং করে প্রবাহ বাড়াতে হবে। বেশির ভাগ মানুষ বলছেন, টিআরএম (টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট-জোয়ারাধার) হচ্ছে সমাধান। আমি আপনাদের পক্ষে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে মামলা করেছিলাম। তখন হাইকোর্ট সরকারকে বলেছিলেন, কেন টিআরএম করতে নির্দেশ দেওয়া হবে না। সেই টিআরএম আজ পর্যন্ত হয়নি। এখন বিষয়গুলো আরও জটিল হয়ে গেছে। এখন আমরা এখান থেকে যেগুলো শুনেছি, সেগুলো লিপিবদ্ধ করব।’

অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা আরও বলেন, দুটি কথা শোনা যাচ্ছে। প্রথমত, কিস্তির টাকা আদায়ে যাতে এখন জোর দেওয়া না হয়। দ্বিতীয়ত, মা-বোনেরা বলছেন, তাঁদের ঘরে খাবার নেই। তাঁরা এখন সরকারের কাছে সাহায্য চান। অবশ্যই তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বসে কোথায় ত্রাণ দিতে হবে, সেটা জানাবেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা যে অবস্থায় আছেন, এই অবস্থায় বাংলাদেশের কোনো মানুষকে দুই দিন রাখলে সে থাকতে পারবে না। এটা সম্ভব নয়। আপনাদের এই যে কষ্ট, এই কষ্ট আমি ঢাকায় গিয়ে সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছে দেব। আপনাদের এই সমস্যার যদি একটা সমাধান আমার হাত দিয়ে হয়, আমি মনে করব, এটাই হচ্ছে আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া।’

এ সময় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মহাপরিচালক আমিরুল হক ভূঞা, যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম ও ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।