‘যে পুলিশ কথা হুনব না, ওই পুলিশরে পরদিন থানায় রাহুম না’
আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) পক্ষে কাজ না করলে সেই পুলিশ সদস্যকে থানায় না রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ওরফে সেলিম। তাঁর এই হুঁশিয়ারি দেওয়া বক্তব্য আজ বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৪৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে কামরুল হাসানকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা হলাম ড. আবদুস সোবহান গোলাপের কর্মী, আমরা আওয়ামী লীগের কর্মী। আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকালে চোখটা খুলে ফেলতে হবে। আবার কেউ যদি বলে পাও ভেঙে ফেলবে, তাহলে আমাকে ফোন দিবেন, চতুর্দিক দিয়ে বল্লার মতো এসে ধরে ওকে শেষ করে দেওয়া হবে..., কোনো ছাড় হবে না। পারবেন না, ভয় লাগে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, পুলিশ আপনাগো কথা হুনে না? যে হালার পুলিশ কথা হুনব না, ওই হলার পুলিশরে পরদিন থানায় রাহুম না। কথা দিয়া গেলাম।’
নির্বাচনী প্রচারণায় নৌকার পক্ষের লোকজনের এ ধরনের বক্তব্যে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম। বৃহস্পতিবার দুপুরে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন তাহমিনা বেগমের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সোহেল রানা।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার রাতে কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের হাকিমুন্নেসা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মাদারীপুর-৩ (সদরের একাংশ, কালকিনি ও ডাসার) আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের পক্ষে নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় হুঁশিয়ারি দিয়ে এসব কথা বলেন তাঁর কর্মী কামরুল হাসান।
সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেলিম আওয়ামী লীগের একজন নেতা হয়ে এক ভীতিকর, উসকানিমূলক এবং পুলিশ বাহিনীকে হেয়প্রতিপন্ন করে বক্তব্য দিয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তার এমন বক্তব্যে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ ও তাঁর কর্মীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে একাধিক কর্মকাণ্ড চালালেও এখন পর্যন্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার আগে থেকে গোলাপ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আসছেন। তাঁর কর্মী-সমর্থক ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি, ভোটারদের হুমকি, ভয় দেখানোর জন্য নানা স্থানে অপ্রীতিকর বক্তব্য দিয়েছেন। বিধিমোতাবেক আমরা অভিযোগ করলেও অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা করা হচ্ছে। কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে তাঁর কর্মীরা বারবার আচরণবিধি ভঙ্গ করে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে।’
তাহমিনা বেগম আরও বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের পক্ষে সেলিমের এমন বক্তব্য পুরো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং সঠিকভাবে নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন মন্তব্যে আমরা ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ।’
ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুল হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই মন্তব্য আমার মিসটেক হয়ে গেছে। এটা আমার ভুল হয়ে গেছে। এখন দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু বলার নেই। আমি আসলেই দুঃখিত। আমি একটা বাহিনীকে এভাবে বলতে পারি না। কোনো অবস্থাতেই বলতে পারি না। আমি নিজে আমার ভুল স্বীকার করছি। যে কাজটি হয়েছে, তা আমি জানি জঘন্যতম অপরাধ। কিন্তু ভুল করে তো বলে ফেলেছি। এখন সরি বলা ছাড়া আর কিছু নেই।’
এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওটি আমি দেখেছি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।’