চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার নির্বাচনের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকবেন নাকি সরে দাঁড়াবেন, তা নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় আলোচনা চলছে। সদ্য নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদকে সমর্থন দিয়ে খাদিজাতুল আনোয়ারকে সরে যেতে ‘মৌখিক’ নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ জন্য চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদেরও ফোন করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে।
তবে এমন আলোচনা ছড়িয়ে পড়লেও নির্বাচনের মাঠ থেকে সরছেন না নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার। তিনি গতকাল শনিবার উপজেলার ভূজপুর ইউনিয়নে গণসংযোগ করেছেন। আজ রোববার সকালে ফটিকছড়ির নারায়ণহাটেও প্রচারণা চালান তিনি। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফটিকছড়ির নারায়ণহাটে আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি।’
সর্বশেষ দুই সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলের প্রার্থীর পরিবর্তে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে নৌকা প্রতীকে সমর্থন দেওয়া হয়েছিল। এবার তাঁকে সমর্থন না দিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ারকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।
অবশ্য শুরু থেকে আলোচনা ছিল আওয়ামী লীগ সদ্য নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদকে সমর্থন দেবে। এবার চট্টগ্রামের দুটি আসনে দলের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও চট্টগ্রাম-২ আসনে দলের প্রার্থী বহাল রাখে আওয়ামী লীগ।
১৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই নির্বাচনী এলাকায় প্রচার ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন খাদিজাতুল আনোয়ার। এর মধ্যে গত বুধবার বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন বিএসপির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ। এর পর থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থন কার পক্ষে যাচ্ছে, তা নিয়ে এলাকায় আলোচনা শুরু হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদের সমর্থনে খাদিজাতুল আনোয়ারকে সরে যেতে কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের ফোন করা হয়।
কেন্দ্র থেকে ফোন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে খাদিজাতুল আনোয়ারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী গতকাল শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্র ও জেলার নেতারা ফোন করে নৌকার প্রার্থীর পরিবর্তে একতারার প্রার্থী পক্ষে আমাদের কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে কী করব, তা এখনো ঠিক করা হয়নি। চারদিকে নৌকার জোয়ার। ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কীভাবে কী করব, ঠিক করা হবে।’
এ বিষয়ে খাদিজাতুল আনোয়ারকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও ধরেননি।
ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের নেতারা একতারার প্রতীকের জন্য কাজ করছেন কি না, তা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে জানানো হবে বলে জানান বিএসপির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ। তিনি গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সরে যেতে। আওয়ামী লীগের লোকজন যাতে আমাকে সমর্থন দেয়।’
স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ পাঁচবার, বিএনপি তিনবার, জাসদ একবার জিতেছিল। তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী নৌকা প্রতীক দিয়ে দুবার জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া একবার আওয়ামী লীগ ও আরেকবার বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি এবার নিজ দলের প্রতীক ফুলের মালা নিয়ে নির্বাচন করছেন। আর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। ফটিকছড়ি আসনে প্রচারণা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন এই চার প্রার্থী।