বগুড়ার দুটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা আলোচিত আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, আজ রোববার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের নির্ধারিত দিন।
হিরো আলম গতকাল শনিবার রাত নয়টায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই তাঁকে নিয়ে কারও কারও ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তিনি প্রার্থী হয়ে অনেকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে গেছেন। মনোনয়নপত্র নিয়ে অনেকে দুশ্চিন্তায় আছেন। বাছাইয়ের দিন পার না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের কাছে দুই আসনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন হিরো আলম। এক দিন বগুড়ায় অবস্থানের পর তিনি পাবনা শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় ‘স্টেজ শো’তে অংশ নিতে গেছেন। সেখান থেকেই শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
মনোনয়নপত্র দাখিলের পর অন্য প্রার্থীরা গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন, এই সময় শো নিয়ে ব্যস্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, দলিল না থাকলে কোনো জায়গাতেই লাভ হয় না। কোনো জায়গায় দাঁড়ানোও যায় না। মনোনয়নপত্র আগে টিকুক। তারপর নির্বাচনের কাজ শুরু করবেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন হিরো আলম। যাচাই-বাছাইয়ের দুই দফায় তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়। উচ্চ আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় হিরো আলম বলেন, ‘সগলি বুঝবার পারিচ্চে, হিরো আলম মাঠত থাকলে ভোটের হিসাব পাল্টে যাবি। এইবার মনোনয়নপত্রের সাথে দুই আসনে মোট ভোটারের ১ শতাংশ সমর্থকের তালিকাও জমা দিচি। কী ভুল ধরে সেই উৎকণ্ঠায় আচি।’
দুই আসনেই মনোনয়নপত্র বৈধ হলে কী করবেন, জানতে চাইলে হিরো আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ষড়যস্ত্রের পরও যদি হামার মনোনয়ন টিকে যায়, তাহলে দুই আসনেই ভোট করমো। কাওকে কষ্ট দিবার চাই না। সগলিক খুশি রাখতেই চাই। দুই এলাকার ভোটাররাই হামাক নানাভাবে উৎসাহ দিচ্চে।’
নির্বাচনী খরচের প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন, টাকা দিয়ে ভোট করতে পারবেন না। সবাই জানে তাঁর কোনো কালোটাকা নেই। মানুষের ভালোবাসা তাঁর শক্তি। মানুষের ভালোবাসার জোরেই এত দূর এসেছেন। জনগণের ভালোবাসায় নির্বাচনে জিততে পারলে ভালোবাসা দিয়ে ভোটারদের ঋণ শোধ করবেন।
নির্বাচনী প্রচারণার খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে হামি তো ঘরত বসে নাই। বিভিন্ন জায়গাত শো করে বেড়াচ্চি। টেকা জমাচ্চি। ভোটের পোস্টার ছাপান লাগবি, ব্যানার বানানা লাগবি। প্রচারণায় খরচ তো জোগার করা লাগবি।’
বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের পর বগুড়া-৪ এবং বগুড়া-৬ আসনে ১ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে।
এই আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা অন্য প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত রাগেবুল আহসান, জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর, জাসদের (ইনু) ইমদাদুল হক, গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনসুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফতে আন্দোলনের মো. নজরুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. ফয়সাল বিন শফিক, স্বতন্ত্র আবদুল মান্নান আকন্দ, সরকার বাদল, সৈয়দ কবির আহম্মেদ, রাকিব হাসান ও সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি মাছুদার রহমান।