কুমিল্লায় অবশেষে মোছা হলো ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীর প্রতিকৃতিতে দেওয়া কালি
কুমিল্লায় নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে লাগানো কালি অবশেষে মুছে ফেলা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই দিন বিকেলেই প্রতিকৃতি দুটিতে কালি লেপন করা হয়েছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরের সার্কিট হাউস ও ঈদগাহ মাঠের মোড়ের গোলচত্বরে এই দুজনের প্রতিকৃতিতে লেপন করা কালি মুছে ফেলা হয়।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রতিকৃতিতে লেপন করা কালি মুছতে যাওয়ায় বাসদ নেতা আবদুর রাজ্জাকের ওপর যারা হামলা চালিয়েছিল, তারা এখনো অধরাই আছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুমিল্লার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগঠক ও কর্মীরা। বাসদ নেতার ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হকের উদ্যোগে নগরের সার্কিট হাউস ও ঈদগাহ মোড়ে স্থাপিত ওই গোলচত্বরে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, সংগীতজ্ঞ শচীন দেববর্মন, বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ খানসহ কুমিল্লার কয়েকজন কীর্তিমান মানুষের প্রতিকৃতি আছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন দুষ্কৃতকারীরা নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ও মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে কালিমা লেপন করে বিকৃত করে দেয়। ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ১৮৩৪ সালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁও এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।
গতকাল সকালে তাঁদের প্রতিকৃতি থেকে কালি মুছতে গিয়ে হামলার শিকার হন বাসদের কুমিল্লা জেলার সমন্বয়ক আবদুর রাজ্জাক।
এদিকে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীর প্রতিকৃতিতে কালিমা লেপনের প্রতিবাদে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকা হয়েছিল। নগরের সার্কিট হাউস ও ঈদগাহ মাঠের মোড়ের গোলচত্বরে এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ কালিমা মুছে ফেলায় শেষ পর্যন্ত সেটি স্থগিত করা হয়।
আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা সেখানে যাচ্ছিল প্রতিকৃতিতে লেপন করা কালি মুছতে। এরই মধ্যে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আমাকে কল করে বলেছেন, জেলা প্রশাসক স্যার বিষয়টি দেখছেন। এ ছাড়া বুধবার সকালেই কালি মুছে ফেলা হয়েছে। পরে আমি শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বিদ্যালয়ের বাইরে যেতে দিইনি। বিদ্যালয় আঙিনায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটেছে ৫ আগস্ট বিকেলে। কিন্তু এটি এত দিন কারও চোখে পড়েনি কেন, বুঝতে পারছি না। ওই ভদ্রলোকের নজরে আসায় তিনি কালি মুছতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে আজ সকালে প্রতিকৃতি থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কালি পরিষ্কার করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, হামলার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে হামলাকারী শনাক্ত হয়েছে। পুলিশ হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরার চেষ্টা করছে।
হামলার শিকার বাসদ নেতা আবদুর রাজ্জাক এখনো কুমিল্লা জেনারেল (সদর) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বলেন, ‘আমি জেনে আনন্দিত, অবশেষে বাংলার প্রথম নারী নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের প্রতিকৃতি থেকে কালিমা মুছে ফেলা হয়েছে। পুলিশ গত রাতে এসে আমার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনেছে। নবাব ফয়জুন্নেসা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় মামলা করা হবে বলে শুনেছি।’
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় আহত ওই বাসদ নেতার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমরা নিজ উদ্যোগে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। আশপাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা আছে কি না, দেখা হচ্ছে। থাকলে ফুটেজ সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া লিখিত অভিযোগ পেলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’