বগুড়ার শেরপুরে রাত জেগে পাহারা চলছে হিন্দুপাড়াগুলোয়

বগুড়ার শেরপুরে রাত জেগে বিভিন্ন বয়সীরা হিন্দু মহল্লাগুলোয় পাহারা দিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শহরের শিশুপার্ক এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

‘রাত জেগে পাহারা দেওয়ার অভ্যাস তো নেই। এখন পরিবার বাঁচাতে প্রতিদিন ভোররাত পর্যন্ত পাহারা দিতে হচ্ছে। এতে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’ এ কথা বলছিলেন প্রদীপ সাহা (৬৭) নামে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী।

শেরপুর পৌর শহরের কর্মকারপাড়ায় প্রদীপ সাহার বাড়ি। বাড়ির সামনে সাহা জুয়েলারি ওয়ার্কশপ নামে তাঁর একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। তিনি হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যেই পাহারা দিচ্ছিলেন। প্রদীপ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতার পালাবদলের এই সময়ে শেরপুর শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। এ কারণে প্রতিবেশী অন্যদের মতো তিনিও আতঙ্কে আছেন। ব্যবসা ও পরিবার রক্ষায় তাঁকে এখন রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে।

এটি কেবল কর্মকারপাড়ার চিত্র নয়। পৌর শহরের হিন্দুপাড়াগুলোর মধ্যে উত্তর সাহাপাড়া, দক্ষিণ সাহাপাড়া, সান্যালপাড়া, জগন্নাথপাড়া, শ্রীরামপুর পাড়া, বসাকপাড়া, ঘোষপাড়া, দত্তপাড়া, গোসাইপাড়া, পালপাড়া ও বৃন্দাবনপাড়ায় রাত জেগে বিভিন্ন বয়সীরা বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাহারা দিচ্ছেন। প্রতিটি দলে থাকছেন ২৫ থেকে ৭০ জন। মহল্লাগুলোয় ১৬ বছরের তরুণ থেকে ৭০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা রাতে পাহারা দিচ্ছেন।

গতকাল শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে মহল্লাগুলোয় গিয়ে দেখা যায়, পাহারাদার এসব দলে বেশির ভাগই তরুণ, যুবক। মহল্লাগুলোয় দুই থেকে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত তাঁরা পাহারা দেন। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মহল্লার মুসলিম সম্প্রদায়ের তরুণ-যুবকেরাও আছেন।

উত্তর সাহাপাড়া মহল্লার সাবেক কাউন্সিলর গোবিন্দ বাগচী, কর্মকারপাড়ার কানাই কর্মকারসহ অন্তত ২০ জন প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর সারা দেশের মতো বগুড়ার শেরপুরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। শহরে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর শহরজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৫ আগস্ট রাত থেকে শেরপুর শহরের ওই সব মহল্লায় বিভিন্ন বয়সীরা রাতে পাহারা বসিয়েছেন।

কর্মকারপাড়ায় পাহারারত বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক রনি কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় শেরপুরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহরজুড়ে। এ কারণে এসব মহল্লায় মানুষেরা নিজেদের সম্মান ও সম্পদ রক্ষার জন্য পাহারা বসিয়েছেন।

পৌর শহরের ৪, ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা বলেন, পুলিশ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতিতে থাকায় শহরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হলেও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শহরের ওই মহল্লাগুলোয় টহল পুলিশের উপস্থিতি থাকলে আতঙ্ক অনেকাংশে কমে যাবে।

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, গত ৫ আগস্ট থেকে পুলিশের রাত্রিকালীন টহল ডিউটি বন্ধ আছে। খুব দ্রুতই শহরের মধ্যে এবং উপজেলার অন্যান্য এলাকায় ডিউটি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা।