নরসিংদীতে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের শোভাযাত্রায় দুর্বৃত্তের গুলি, একজন নিহত
নরসিংদীতে জেলা ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিত নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে একজন নিহত ও অপরজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শহরের জেলখানা মোড়ে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ঢোকার পথে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমানের (৩৫) মাথায় গুলি লেগেছিল। আর আহত আশরাফুল হকের (২২) গুলি লেগেছে পিঠে। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত ছাদিকুর নরসিংদী সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বাদুয়ারচর এলাকার বাসিন্দা আর আশরাফুল শহরের সাটিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা দুজনই শোভাযাত্রার সামনের দিকে ছিলেন।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটের দিকে ছাদিকুর মারা যান। তাঁর মরদেহ হাসপাতালের মর্গে আছে। অপরজন চিকিৎসাধীন।
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা জানান, ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে চার মাস ধরে তাঁরা আন্দোলন করছেন। এরই অংশ হিসেবে আজ জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমানের নেতৃত্বে তাঁরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করেন। এতে অন্তত ৫০টি মোটরসাইকেলে শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। শহরের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণের পর জেলখানা মোড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পার হয়ে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল শোভাযাত্রাটি। এ সময় হঠাৎ গুলি করা হয়। এতে ছাদিকুরের মাথায় ও আশরাফুলের পিঠে গুলি লাগে। তাঁরা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং অন্তত পাঁচজনকে পিটিয়ে আহত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন ও শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা গুলিবিদ্ধ দুজনসহ আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছাদিকুর ও আশরাফুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, ছাদিকুর ও আশরাফুল নামের দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ছাদিকুর মাথায় ও আশরাফুল পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা ও সদ্য বহিষ্কৃত সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, ‘বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নির্দেশে আজ হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। আমি এখন গুলিবিদ্ধ দুজনের সঙ্গে আছি। চিকিৎসা শেষে এ বিষয়ে কথা বলব।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলার আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় মিটিংয়ে আছি। জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে পুলিশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা আমাদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। এখন তারা নিজেরা নিজেরাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বলছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলে ই খোদা বলেন, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তার কর্মী-সমর্থকেরা বিভিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এর জেরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি তিনিসহ মোট তিনজন ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।
২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার রাতেই পদবঞ্চিত নেতাদের ২০-২৫ জন সমর্থক জেলা বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেন। ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের জানালা ও সিঁড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন। ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্থানেই খায়রুল কবির খোকনের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তাঁরা। ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে তাঁরা বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে খায়রুল কবির খোকনের গাড়িবহরে গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনাও ঘটে। ৫ এপ্রিল কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। সর্বশেষ ২০ মে আবার ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।