রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ওপর হামলা পরিকল্পিত, বললেন শিক্ষকেরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজার ওপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটা পরিকল্পিত হামলা। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনসংলগ্ন প্যারিস রোডে শিক্ষক সমিতি আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে শিক্ষকেরা এসব কথা বলেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান, আইন অনুষদের ডিন আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক জিন্নাত আরা বেগম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসুদুল হাসান খান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মোছা. হাসনা হেনা, সহযোগী অধ্যাপক মোহা. সোলাইমান চৌধুরী, নাসিম রেজা প্রমুখ।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আলী রেজার ওপর আঘাত শুধু একজন শিক্ষকের ওপর নয়, এটা সমাজের ওপর আঘাত। এটা প্রতিহত করতে হবে। শিক্ষকদের মতো নিরীহ প্রাণী আর নেই। তাঁদের মারলে কিছু হয় না। বিচার-সালিস হয় না। তারা নির্বিঘ্নে এসব কাজ করে যাচ্ছে। এখনো মূল হোতা ধরা পড়েনি।’ তিনি আশা করছেন, দ্রুত জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আলী রেজা স্যারের ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। সারা দেশেই শিক্ষার ওপর যে হামলা চলছে, আমাদের পাঠ্যসূচিতে যে হামলা, জ্ঞানের ওপরে যে হামলা...। প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকেরা কোনো না কোনোভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। এই হামলা তারই প্রতিফলন। একটি জাতি কোন পর্যায়ে গেলে তার শিক্ষার ওপর এ রকম লাঞ্ছনা আসতে পারে, সেটা ভেবে দেখতে হবে। আজ শিক্ষকেরা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত।’
ফরিদ উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘এর আগে উপাচার্যকে স্থানীয় এক নেতা লাঞ্ছিত করেছিলেন, আমরা কিন্তু তার বিচার করতে পারিনি। এই শহরের একজন বড় নেতা মাইকে বলে গেছেন, “আপনারা আমাদের হাত ধরে ক্ষমতায় এসেছেন। আমাদের ছেলেমেয়েদের চাকরি দেন না। আপনারা কীভাবে রাস্তায় হাঁটেন, আমরা তা দেখে নেব।” আমরা শিক্ষকেরা সেদিন নিশ্চুপ থেকেছি। আজকের এই ঘটনা আমাদের নিজেদের দুর্বলতারই একটি প্রতিফলন।’
আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক শিক্ষক সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। সে রকম একটি প্রেক্ষাপটে একজন শিক্ষকের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। এই সন্ত্রাসীদের নাম দেওয়া হয়েছিল মোটরসাইকেল সন্ত্রাসী বাহিনী। এটা শুধু আজকের ঘটনা নয়। দিনের পর দিন রাজশাহীর রাস্তাঘাটে এদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শিক্ষকেরা ক্ষমতাহীন, মানুষ গড়ার কারিগর, প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। এই সুযোগে শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতে তারা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা বোধ করে না। এই আঘাতের পর তাদের আচরণ আরও ভয়াবহ।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহা. সোলাইমান চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু ৭২ ঘণ্টা পার হতে চললেও মূল আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মূল আসামি যখন গ্রেপ্তার না হয়, তখন সন্দেহ তৈরি হয়।
গত শুক্রবার অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজার গাড়ি থামিয়ে তাঁকে মারধর ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে তিনি থানায় মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। পরে এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে মামলার অন্য আসামিকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ ঘটনায় গত শনিবার ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. মোবারক পারভেজ বলেন, মামলার পরই একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।