প্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গে ফেলে আসা সোনালি দিনগুলোর কথা খুব বেশি করে মনে পড়ে। শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণে শিক্ষকেরা নিঃস্বার্থ কারিগর। সেই গুণী শিক্ষকদের সম্মান করতে হবে।
আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২২ উপলক্ষে রংপুরে আয়োজিত সুধী সমাবেশে এ কথা বলেন বক্তারা। আজ বৃহস্পতিবার শহরের একটি রেস্তোরাঁয় এ সুধী সমাবেশ আয়োজন করা হয়। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে সুধী সমাবেশ। প্রথম আলোর রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফুল হকের সঞ্চালনায় একে একে শিক্ষক, সাহিত্যিক, লেখকসহ নানা শ্রেণি–পেশার সুধীজন আলোচনায় অংশ নেন।
কাউনিয়া ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শাশ্বত ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমার দাদা, বাবা শিক্ষক ছিলেন। আমরা ছয় ভাইও শিক্ষক।’ কৈশোরকালে প্রাথমিকের মোসলেম উদ্দিন স্যারের কথা স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘স্যার কখনো বেত নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে শাসন করেননি, ভালোবাসে আদর করে পড়াশোনা শিখিয়েছেন। সেই শিক্ষকের কথা মনে হলে চোখে জল আসে।’
কারমাইকেল কলেজের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তোফায়েল হোসেন বলেন, উপমহাদেশে শিক্ষকেরা সব সময় সম্মানিত হয়ে আসছেন। এখনো শিক্ষকেরা সমাজে সম্মানিত। আইপিডিসির সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রথম আলো সেই ঐতিহ্যকে ধারণ করেন শিক্ষক সম্মাননা দিচ্ছে—এটি প্রশংসার দাবি রাখে।
সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, প্রিয় শিক্ষক হিসেবে যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁরা সব শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। মাহিগঞ্জ কলেজের শিক্ষক নাসিমা আক্তার বলেছেন, আলোকিত শিক্ষকদের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্ম আলোকিত হবে।
আইপিডিসি রংপুরের ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রথম আলোর সঙ্গে প্রিয় শিক্ষক সম্মাননার মতো একটি মহৎ অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকতে পেরে আনন্দিত।’
আয়োজিত সুধী সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিত্য ঘোষ, ২০২১ সালের প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা পাওয়া শিক্ষক শফিয়ার রহমান, রংপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমীন, ইন্টারন্যাশনাল গ্রামার স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ ইয়াসিন নূর আলম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিজুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম, খাসবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজা বেগম, মজিদা খাতুন কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুজ্জামান, সুজন মহানগর কমিটির সভাপতি ফখরুল আনাম, মিলিনিয়াম স্টারস স্কুল ও কলেজের শিক্ষক মারুফ হোসেন, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ আহসান হাবীব, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষক আজহারুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাবিনা শারমিন, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সদস্য রাজেশ দে, ধর্মদান বড় আউলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজনীন আক্তার খানম, শিশু নিকেতন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিমল রায়, প্রভাতি মুক্ত স্কাউট ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবদুস সোবহান, আক্কেলপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম আজম প্রমুখ। আলোচনা শেষে উপস্থিত সুধীজনদের ধন্যবাদ জানান প্রথম আলো রংপুর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান।
অনুষ্ঠানে ‘আখতার স্যার’, ‘আলীনুর স্যার’, ‘মজুমদার স্যার’ শিরোনামের তিনটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানানো এ ভিডিও চিত্র দেখে উপস্থিত বেশির ভাগ অতিথির চোখ ভিজে ওঠে। অনুষ্ঠানে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন রংপুর বন্ধুসভার সদস্যরা।
আইপিডিসি-প্রথম আলো ২০১৯ সাল থেকে এ সম্মাননা দিয়ে আসছে। মনোনীত শিক্ষকদের মধ্য থেকে বাছাই করে প্রিয় শিক্ষকদের নির্বাচিত করা হয়। আয়োজকেরা জানান, প্রিয় শিক্ষক মনোনয়নকারীদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৮ বছর। একজন মনোনয়নকারী সর্বোচ্চ তিনটি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। অনলাইনে (www.priyoshikkhok.com) নির্ধারিত ফরম পূরণ করে এ মনোনয়ন দেওয়া যাবে। অনলাইনে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া ওই ওয়েবসাইট থেকে পিডিএফ ফরম ডাউনলোড করে তা পূরণের পর ডাকযোগেও মনোনয়ন পাঠানো যাবে। মনোনয়ন কার্যক্রম চলবে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।