সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে নিখোঁজ ছেলেকে চার মাস ধরে হন্যে হয়ে খুঁজছেন বাবা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের চার মাস পেরিয়ে গেলেও মো. ইয়াছিন (২৮) নামের এক তরুণের সন্ধান পায়নি তাঁর পরিবার। ছেলেকে জীবিত কিংবা মৃত হলেও পাওয়ার জন্য ঘটনার পর থেকে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন তাঁর বাবা। এ জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিজের ডিএনএ নমুনাও দিয়েছিলেন। তবে চার মাসেও ইয়াছিনের বিষয়ে কোনো তথ্য না পাওয়ায় মুষড়ে পড়েছে পরিবার।
ইয়াছিনের বাবা বদিউল আলম জানান, তাঁর ছেলে বিএম কনটেইনার ডিপোর লরিচালক ছিলেন। গত ৫ জুন ডিপোতে বিস্ফোরণের পর থেকে ছেলে নিখোঁজ। দুর্ঘটনার পর থেকে ছেলের খোঁজে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েছেন তিনি। চমেক হাসপাতালে ডিএনএ নমুনাও দিয়েছেন। কয়েক দিন চট্টগ্রামে অবস্থান করে শেষে ভগ্নহৃদয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। কয়েক দিন আগেও ছেলের খোঁজে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। তবে হাসপাতাল থেকে লাশের বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পাননি তিনি।
মো. ইয়াছিনের বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোসাইপুর গ্রামে। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে ইয়াছিন তৃতীয়। বছর দশেক আগে বিএম কনটেইনার ডিপোতে গাড়িচালকের সহকারী হিসেবে কাজ নেন তিনি। দুই বছর আগে পদোন্নতি পেয়ে ডিপোর লরিচালক হন। বিস্ফোরণের সময় ইয়াছিন ডিপোতেই ছিলেন।
চার থেকে পাঁচজন লোক মিলে সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপো, চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি ছেলেকে।
ইয়াছিনের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ ইউসুফ (১৮) প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের রাতে ডিপোতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ইয়াছিন। আগুনের সেই দৃশ্য তিনি তাঁর মুঠোফোন থেকে ফেসবুক লাইভে দেখাচ্ছিলেন। লাইভ দেখে ইয়াছিনকে ফোন করেন ইউসুফ। তখন ইয়াছিন ইউসুফকে বলেন, ‘আগুনের ভয়াবহতা অনেক। আমার জন্য দোয়া করিস।’ এর কিছুক্ষণ পরই লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। মুহূর্তেই অন্ধকার হয়ে যায় মুঠোফোনের পর্দা। এর পর থেকে খোঁজ নেই ইয়াছিনের।
অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের পরদিন ইয়াছিনের নিখোঁজের খবরে বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু হয়। সেই শোক এখনো থামেনি। ইয়াছিনের মা জহুরা বেগম দিনের বেশির ভাগ সময় ঘরের সামনে আনমনে বসে থাকেন। এখন কাউকে দেখলেই বলেন, ‘তোমাগো কাছে টাকাপয়সা বা অন্য কিচ্ছু চাই না। আমার বুকের ধনরে আনি দাও।’
ইয়াছিনের বাবা বদিউল আলম বলেন, ‘চার থেকে পাঁচজন লোক মিলে সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপো, চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি ছেলেকে। চট্টগ্রাম মেডিকেলে গিয়ে ডিএনএ নমুনা দিয়েছি। তারও চার মাস পেরিয়ে গেছে। ছেলেকে জীবিত পাওয়ার আসা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের আশা, অন্তত একটা খোঁজ মিলুক।’