নওগাঁ-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার এখন বছরে আয় করছেন ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। দুই মেয়াদে সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব পালনের পর তাঁর আয় বেড়ে ১৪০ গুণ হয়েছে।
আয় বাড়ার পাশাপাশি এই সংসদ সদস্যের সম্পদও বেড়েছে। ১০ বছরে স্থাবর সম্পদ বেড়ে প্রায় ২৮ গুণ এবং অস্থাবর সম্পদ বেড়ে সাড়ে ৬ গুণ হয়েছে। আসন্ন দ্বাদশ ও দশম সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা তাঁর হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
নওগাঁর মহাদেবপুর ও বদলগাছি উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৩ সংসদীয় আসন। ২০১৪ সালে এখানে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকরাম হোসেন চৌধুরীকে পরাজিত করেন ছলিম উদ্দীন। ২০১৮ সালে তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হন। মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছলিম উদ্দীন এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এখানে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
২০১৪ সালের হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে ছলিম উদ্দীন লিখেছিলেন এসএসসি। ২০১৮ সালে সেটি এইচএসসি উল্লেখ করেছিলেন। এবারও সেটিই আছে। তবে বরাবরই তিনি পেশা হিসেবে চাল ব্যবসা, মৎস্য চাষ ও জোতদারি উল্লেখ করেছেন। বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন কৃষি খাত থেকে ৬ লাখ টাকা ও ব্যবসা থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা। সংসদ সদস্যের বেতন–ভাতা উল্লেখ করেছেন ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তিনি সংসদ সদস্যের বেতন–ভাতা উল্লেখ করেছিলেন ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে তাঁর এই আয় ছিল না। ওই সময় তিনি মোট আয় করতেন ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৬২ টাকা।
সংসদ সদস্য হিসেবে অন্যদের বেতন–ভাতা না বাড়লেও ছলিম উদ্দীনের ৬ লাখ থেকে ৬ কোটি হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
২০১৪ সালে ছলিম উদ্দীনের অস্থাবর সম্পদ ছিল ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার। এখন তাঁর অস্থাবর সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। ১০ বছর আগে তাঁর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ ছিল ১১ লাখ টাকা। এখন হয়েছে ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখন ছলিমের হাতে আছে ৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ২ লাখ টাকা, গাড়ি আছে ১ কোটি ৬ লাখ টাকার। ১০ বছর আগে তাঁর স্ত্রীর হাতে ছিল নগদ ১০ হাজার টাকা। এখন আছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
২০১৪ সালের হলফনামায় ছলিম উদ্দীন পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২০ দশমিক ৯৮ একর কৃষিজমি থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। সেই জমির সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে আরও ৪১৪ দশমিক ৪২ শতক। আগে অকৃষিজমি ছিল ১ দশমিক ৫২ শতক। এবার তিনি ২২২ শতক অকৃষিজমি দেখিয়েছেন। ঢাকার পূর্বাচলে ৩ কাঠার প্লটের জন্য ৬ লাখ টাকা কিস্তি দেওয়ার তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
২০১৪ সালের হলফনামায় পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২০ একর ৯৮ শতক জমি ছাড়া ওই সময় তাঁর মোট স্থাবর সম্পদের মূল্যমান ছিল ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এখন তাঁর কৃষি ও অকৃষিজমির মোট মূল্যমান ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯০ টাকা বলে উল্লেখ করেছেন ছলিম। এবারের হলফনামায় ৯টি পুকুর ও একটি মৎস্য খামারের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। যার মোট মূল্য উল্লেখ করেছেন ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে তাঁর মোট স্থাবর সম্পদের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৮৯ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০ টাকা। যা ২০১৪ সালের তুলনায় বেড়ে ২৭ দশমিক ৮০ গুণ হয়েছে।
২০১৪ সালের হলফনামায় ছলিম উদ্দীন তরফদার তাঁর স্ত্রীর নামে কোনো স্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ না করলেও এবার তাঁর স্ত্রীর ২৬ লাখ টাকা মূল্যের কৃষি ও অকৃষিজমি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।