বাজিতপুরে এক বাজারের ইজারার অর্থ আদায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধা

কিশোরগঞ্জ জেলার ম্যাপ

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাজার থেকে ইজারার অর্থ আদায়ে স্থানীয় বিএনপির নেতারা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাজারটির ইজারাদার আবদুল্লাহ আল মামুনের অভিযোগ, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধায় সেখান থেকে ইজারার অর্থ আদায় করতে পারছেন না।

মামুনের দাবি, এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পিরিজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল আলম ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি কবির হোসেন। তাঁরা সহোদর।

অন্যদিকে মামুনের বাবা গোলাপ মিয়া পিরিজপুর ইউনিয়নের সাবেক আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান। আর বড় ভাই জাফর ইকবাল নৌকা প্রতীক নিয়ে ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া মামুন নিজেও আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামুনের পরিবার স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়। মামুন এর আগেও বাজারটির ইজারাদার ছিলেন। চলতি বছর পয়লা বৈশাখ ১ কোটি ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে সবজি ও কলার জন্য প্রসিদ্ধ ওই বাজারের ইজারা স্বত্ব লাভ করেন তিনি।

ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক–লাগোয়া বাজারটিতে এত দিন স্বাভাবিক গতিতে ইজারার অর্থ আদায় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। তবে গত ৫ আগস্টের পর থেকে এর ছন্দপতন ঘটে। পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মামুন ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর চাপ আসতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ওই দিনই তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় ইউনিয়ন পরিষদেও।

গত সপ্তাহের শনিবার বাজারটি থেকে ইজারার অর্থ তুলেছেন মনির মিয়া, জামাল মিয়া ও মধু মিয়া নামের বিএনপির তিন সমর্থক।

মাহমুদুল আলম ও কবির হোসেন নিজেদের নামে ইজারা হস্তান্তর করে নিতে চান। অন্যথায় মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। দুটির কোনোটিতে রাজি হইনি। এ কারণে আমার লোকদের বের করে দিয়ে অন্য লোক দিয়ে ইজারা আদায় করছেন তাঁরা। এতে আমার প্রতিদিন সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
আবদুল্লাহ আল মামুন, ইজারাদার

এ প্রসঙ্গে ইজারাদার মামুন বলেন, ‘মাহমুদুল আলম ও কবির হোসেন নিজেদের নামে ইজারা হস্তান্তর করে নিতে চান। অন্যথায় মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। দুটির কোনোটিতে রাজি হইনি। এ কারণে আমার লোকদের বের করে দিয়ে অন্য লোক দিয়ে ইজারা আদায় করছেন তাঁরা। এতে আমার প্রতিদিন সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।’

বিএনপির পক্ষ থেকে মামুন ও তাঁর ইউপি চেয়ারম্যান ভাই জাফর ইকবালকে আসামি করে একটি মামলাও হয়েছে। এর পর থেকে তাঁরা নিজেদের আড়াল করে রেখেছেন বলে জানান জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, ‘পটপরিবর্তন–পরবর্তী বড় আগ্রাসনের শিকার ইউপি পরিষদ। ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর আমাকে করা হয় আসামি। এখন আমি পরিষদে যেতে পারি না। সেই কারণে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার মামুনের একটি মুরগির খামার থেকে প্রায় সাড়ে দশ হাজার ডিম লুট হয়। এই লুটের পেছনেও মাহমুদুল আলম ও কবির হোসেনের ইন্ধন আছে বলে মামুন দাবি করছেন।

মামুন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাজারে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বছরের পর বছর ধরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অন্যায় করছেন। বিশেষ করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা প্রক্রিয়ায় খাজনা আদায় করছেন। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন; একই সঙ্গে বাজারের সুনামও নষ্ট হচ্ছে।
মাহমুদুল আলম, অভিযুক্ত বিএনপি নেতা

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মাহমুদুল আলম বলেন, ‘মামুন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাজারে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বছরের পর বছর ধরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অন্যায় করছেন। বিশেষ করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা প্রক্রিয়ায় খাজনা আদায় করছেন। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন; একই সঙ্গে বাজারের সুনামও নষ্ট হচ্ছে।’

বিএনপির নেতা-কর্মীদের কেউ খাজনা (ইজারার অর্থ) আদায় করছেন না জানিয়ে মাহমুদুল বলেন, ‘অপরাধীরা যখন অপরাধ করতে পারে না, তখন উল্টো অভিযোগ তুলে নিজের পাপমোচনের চেষ্টা করেন। মামুনও তা–ই করছেন।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারাশিদ বিন এনামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।