ময়মনসিংহে ওএমএসের চাল-আটা নিতে ভিড়, শুরু হয়নি টিসিবির কার্যক্রম

ময়মনসিংহে ওএমএসের চাল-আটা নিতে মানুষের লাইন। আজ সকাল সোয়া আটটার দিকে নগরের বাতিরকল এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

আজ বুধবার সকাল ৮টা ১০ মিনিট। ময়মনসিংহ নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাতির কল এলাকায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ। তাঁরা কেউ দাঁড়িয়ে আছেন চালের জন্য, কেউ আটার জন্য। আবার কেউ কেউ দুটোই কিনবেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভিড় বাড়তে থাকে। এরপর নয়টার দিকে শুরু হয় চাল-আটা বিক্রি। এটি সেখানকার একজন ওএমএস ডিলারের দোকানের সামনের চিত্র।

লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতারা জানিয়েছেন, ওএমএসের দোকানে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও প্রতি কেজি আটা ২৪ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। প্রত্যেক ক্রেতা পাঁচ কেজি করে চাল ও সমপরিমাণ আটা কিনতে পারেন। বাজারে পাঁচ কেজি চাল ৩০০-৩২০ ও আটা ২২০ টাকায় কিনতে হয়। তবে এখানে বাজারমূল্যের অর্ধেকে কেনা যায়।

নগরের মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম (৫৮) প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল সাতটায় এসেছি, তা না হলে লাইন বড় হয়ে যায়। দুই ছেলে ও তিন মেয়ে অল্প খরচ দেয়, তা দিয়ে জীবন চালাতে হয়। বর্তমান চড়া মূল্যের বাজারে চাল-আটার সঙ্গে নতুন পণ্য যুক্ত করা গেলে মানুষ উপকৃত হবে।’

নগরের আকুয়া চুকাইতলা এলাকার বাসিন্দা আবদুল কদ্দুস (৭০) পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। এখন শারীরিকভাবে অক্ষম। চাল ও আটা নিতে সকাল সাতটায় লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পরে এলে লাইন বড় হয়ে যায়। সে কারণে ভোরে আসতে হয়। ভোরে না এলে চাল ও আটা নিতে পারি না। একটা নিয়ে যেতে হয়।’

নগরের ঘুণ্টি থেকে সকাল সাড়ে ছয়টায় আসেন বানু বেগম (৭০)। স্বামী-সন্তান নেই এই বৃদ্ধার। আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি বলেন, ‘মাইনসের কাছে চাইয়া-মাইগ্যা খাই। আইজ ২০ দিন পর চাইল ও আটা নিতে আইছি। বাজারে অত দরের চাইল কিইন্যা খাওনের বাউ নাই। এইনে কম দামে পাওন যায়। তাই সহাল থাইক্যা বইসা আছি।’

ওএমএসের দোকান থেকে চাল বিক্রি করছিলেন মোজাম্মেল হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখা হয়। প্রতিদিন এক টন চাল ও এক টন আটা বরাদ্দ পাওয়া যায়। সকালের দিকে প্রচুর ভিড় থাকে। শুরুর দিকে প্রতি ক্রেতাকে পাঁচ কেজি করে চাল ও আটা বিক্রি করা গেলেও শেষের দিকে যাকে চাল দেওয়া যায়, তাকে আটা দেওয়া যায় না। কারণ, দুটি পণ্য একসঙ্গে একজন ক্রেতাকে দেওয়া হলে অনেক ক্রেতাকে খালি হাতে ফেরত যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, নাগরিকেরা জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে চাল ও আটা নিতে পারেন। চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে চাহিদা বেড়েছে। চাল-আটার সঙ্গে আরও কিছু পণ্য যুক্ত করা যেতে পারে।

সকাল সোয়া নয়টায় নগরের নতুন বাজার সাহেব আলী রোডে মেসার্স বিবেক স্টোর ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রির দোকানের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন নারী ও পুরুষেরা। তাঁদের একজন আবদুল হাই (৬০), যিনি পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন, বাজার থেকে পাঁচ কেজি চাল কিনলে ৩০০ টাকার কমে কেনা সম্ভব নয়। কিন্তু এখানে অর্ধেক দাম।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন ১৭টি স্থানে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। প্রত্যেক ডিলার এক টন করে চাল ও এক টন আটা বরাদ্দ পান। আগেও একই পণ্য বিক্রি করা হতো। ওএমএসে পণ্য বিক্রির পরিধি বাড়েনি। ১৭ স্থানের জন্য নগরে ৫৩ জন ডিলার আছেন। তাঁরা ১৭টি স্থানে পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ পেতেন। তবে এর মধ্যে একজন ডিলার মৃত্যুবরণ করেছেন এবং গত ৫ আগস্টের পর আটজন ডিলার আত্মগোপনে চলে গেছেন। বর্তমানে ৪৪ জন ডিলার নগরীতে ওএমএস কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

ময়মনসিংহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল কাদের বলেন, প্রতিদিন ১৭টি পয়েন্টে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে। যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা দিয়েই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে।

শুরু হয়নি টিসিবি

ময়মনসিংহ জেলায় টিসিবির ৪৪৭ জন ডিলার আছেন। নগরী ও জেলার ১৩টি উপজেলায় এসব ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হয়। একজন মানুষ দুই কেজি ডাল, দুই কেজি সয়াবিন তেল ও পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারেন। চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও আজ বুধবার পর্যন্ত জেলায় টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয়নি।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ময়মনসিংহের আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নতুন লোক বদলি হয়েছে, আমাদের প্রস্তুতি নিতে সময় লাগছে। ২৯ অক্টোবর থেকে পণ্য বিক্রি শুরু হবে।’