বন্যাদুর্গতদের পাশে ‘অচিনপুরী ফাউন্ডেশন’

বন্যাকবলিত মানুষের কাছে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন অচিনপুরী ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরাছবি : সংগৃহীত

বন্যার পানিতে ভাসছে সিলেট। তলিয়ে গেছে বাসাবাড়ি, রান্নাঘর। অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট। এ অবস্থায় বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘অচিনপুরী ফাউন্ডেশন’। সংগঠনটির সদস্যরা দুর্গত এলাকায় গিয়ে বিপাকে পড়া মানুষের হাতে খাদ্যসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় নানা উপকরণ তুলে দিচ্ছেন।

ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরপরই ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন। এখন পর্যন্ত সিলেট ও মৌলভীবাজারের দেড় হাজার পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দেন। খাদ্যসহায়তা হিসেবে তাঁরা চিড়া, চিনি, বিস্কুট, খাবার স্যালাইন, দুধ, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ নানা উপকরণ বিতরণ করেন। এ ছাড়া সম্প্রতি পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্যার্থে টিএসএফ ফাউন্ডেশনকে নগদ ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর অচিনপুরী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। এই চক্ষুবিশেষজ্ঞ ‘অচিনপুরী’ নামে দেশ-বিদেশে সুপরিচিত। তিনি জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও গীতিকার। তাঁর বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বেতসান্দি গ্রামে। ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি নানা মানবিক কাজ করছেন।

ফাউন্ডেশনের একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, সিলেটে গত ২৯ মে প্রথম দফার বন্যা পরিস্থিতিতে অনেকেই পানিবন্দী হয়ে পড়েন। নৌকার অভাবে তাঁরা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা নৌকায় আটকে পড়াদের উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে আনেন। এখনো বন্যার্তদের সহায়তায় তাঁরা কাজ করছেন।

ফাউন্ডেশন সূত্র জানায়, জহিরুল ইসলামের চিকিৎসা আর ইউটিউব-ফেসবুককেন্দ্রিক গানের চ্যানেলে উপার্জিত টাকা এবং বন্ধুবান্ধব ও ঘনিষ্ঠজনদের সহযোগিতায় ফাউন্ডেশনটি পরিচালিত হচ্ছে। এ ফাউন্ডেশন বছরব্যাপী দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা, ঘর নির্মাণ, ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসা, দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিয়ে দেওয়া, এতিমদের সহায়তা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, মসজিদে সহযোগিতাসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিভিন্ন দুর্যোগেও প্রতিষ্ঠানটি খাদ্যসহায়তাসহ নানা মানবিক কাজ করে থাকে।

স্বেচ্ছাসেবকেরা জানান, ফাউন্ডেশনের কোনো নির্দিষ্ট কর্মী নেই। সাধারণত মানবিক কাজগুলো জহিরুল ইসলাম ও তাঁর চিকিৎসক স্ত্রী শরীফুন্নেছা চৌধুরী করে থাকেন। কোনো দুর্যোগ এলে জহিরুল সামাজিক ফেসবুকে স্বেচ্ছাসেবক আহ্বান করেন। যাঁরা যোগাযোগ করেন, তাঁদের নিয়েই মানবিক কাজ শুরু করেন। এবারের বন্যাতেও অসংখ্য তরুণ-যুবক যোগ দিয়েছেন। তাঁরা ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে, কখনো কোমরপানি ডিঙিয়ে বন্যাকবলিতদের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন।

চিকিৎসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৯ সালে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে তিনি শাহজালাল আই ফাউন্ডেশনের ব্যানারে জনসেবামূলক কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলে। সেখানে তিনি স্বল্প ও বিনা মূল্যে দরিদ্র রোগীদের চক্ষুসেবা ও অস্ত্রোপচার করতেন।

জহিরুল আরও বলেন, ২০২১ সালে অচিনপুরী ফাউন্ডেশন চালু করে তিনি সমাজসেবামূলক কাজ শুরু করেন। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায়ও তাঁর ফাউন্ডেশন ত্রাণসহায়তা দিয়েছিল। এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত ফাউন্ডেশন থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এ কাজ এখনো চলমান।