নিক্সনের কাজ বালু কাটা আর শেখ হাসিনার কর্মীদের রক্ত চোষা: কাজী জাফর উল্যাহ
ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন-সদরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীকে ‘কাগুজে বাঘ’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেছেন, ‘নিক্সনের কাজ বালু কেটে নিজের পকেট ভরা আর শেখ হাসিনার কর্মীদের রক্ত চোষা।’
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নে এক কর্মিসভায় আজ শনিবার বিকেলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় ঘারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ কর্মিসভার আয়োজন করে ঘারুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী জাফর উল্যাহ সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনেরও সমালোচনা করেন। বিকেল ৫টা ৩৮ মিনিটে তিনি বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। প্রায় ১০ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কোভিডের সময় আমি এলাকায় আসতে পারিনি। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল বয়সী নেতাদের বাড়ির বাইরে বের না হতে। এই সুযোগে আমার কর্মীদের বিরুদ্ধে নিক্সন, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ফাঁকা মাঠ পেয়ে হামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে চরম নির্যাতন করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের অনুসারীরা বাড়িতে বসে থাকতে পারেন না।’
কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অথচ দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতন থামেনি। যাঁরা নির্যাতন করেছেন, তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না। ঢাকায় থাকাকালীন এলাকার নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের হাসপাতালে নিতে নিতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।’ ‘আর বসে থাকা যাবে না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ওই গুন্ডা-বদমাশদের সমুচিত জবাব দিতে হবে। যারা খারাপ ব্যবহার করেছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। গুন্ডা-বদমাশদের এখন হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘কিছু লোক চাঁদাবাজি করছে, তারা বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র পরিচয় দেয়, তাদের আমি ঘৃণা করি। তারা বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র পরিচয় দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে পচাতে চায়, শেখ হাসিনাকে পচাতে চায়। দিনের বেলা নৌকা আর রাতের বেলা আনারস, সিংহ, নিক্সন যারা করে তাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে।’
ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনে ২০১৪ সালে আনারস এবং ২০১৮ সালে সিংহ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন। ওই দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে হেরে যান কাজী জাফর উল্যাহ। এর পর থেকে ওই তিন উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতারা কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান।
কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘২৭ ফেব্রুয়ারি নিক্সন ভাঙ্গায় একটা জনসভা করেছিল। সেই সভা শেষে নিক্সনের গুন্ডাবাহিনী ঘারুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিবরিয়া মাতুব্বরকে নির্মমভাবে হাতুড়ি দিয়ে পেটায়। তিনি এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আমি ভেবেছিলাম নির্বাচন করব না কিন্তু এ অবস্থায় তো আর বসে থাকতে পারি না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভয় পেলে চলবে না।’ তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের জন্য আপনারা এখন থেকেই প্রস্তুতি নেন। বিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমরা যারা আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, তারা এ পরিস্থিতিতে ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। আপনাদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে নৌকায় ভোট দিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।’
ঘারুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফসহ জেলা ও উপজেলার জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেন।