সভাপতি-ইমাম দ্বন্দ্ব, খুলে নেওয়া হলো মসজিদের ফ্যান ও মাইক

বরিশাল জেলার মানচিত্র

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার এক মসজিদে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইমামের মধ্যে বিরোধ চলছে। বিরোধকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার ইমামের সমর্থিত লোকজন মসজিদের ফ্যান, মাইক ও আইপিএস খুলে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আজ রোববার উজিরপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

বামরাইল ইউনিয়নের হস্তীশুণ্ড গ্রামের মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদটি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরোনো। শুরু থেকে ওয়াকফ সম্পত্তিতে একটি আধপাকা ভবন নির্মাণ করে সেখানে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে আসছিলেন। ২০০৯ সালে কুয়েতি একটি সংস্থার উদ্যোগে পাকা ভবন করা হয়। তখন পুরোনো মসজিদটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন মসজিদে সবাই নামাজ আদায় করেন। ৩৫ বছর ধরে মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হাই এবং সভাপতি হিসেবে তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মাহাবুব উদ্দিন মোল্লা। এক বছর ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও ইমামের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।

গ্রামের লোকজন বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইমাম ও সভাপতির মধ্যে বিরোধ চলছিল। পরবর্তী সময়ে এলাকার মুসল্লিরা এতে জড়িয়ে পড়েন এবং দুই ভাগে বিভক্ত হন। সম্প্রতি সভাপতি মাহাবুব উদ্দিন একক ক্ষমতায় কমিটির সভা না করে ইমাম আবদুল হাইকে চাকরিচ্যুত করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়।

সভাপতি সমর্থক মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, ইমামের সমর্থক ইয়ামিন সরদার ও সাইফুল শেখ গতকাল মসজিদের ফ্যান, মাইক ও আইপিএস খুলে নিয়ে পাশের পরিত্যক্ত পুরোনো মসজিদ ভবনে স্থাপন করে সেখানে নামাজ আদায় করেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে ইয়ামিন সরদার ও সাইফুল শেখ বলেন, মসজিদের সভাপতি মাহাবুব উদ্দিন মোল্লা মসজিদ পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন। তিনি একক সিদ্ধান্তে মসজিদের ইমামকে চাকরিচ্যুত করে বিতাড়িত করেছেন। মুসল্লিরা নিজেদের টাকা দিয়ে ফ্যান, মাইক ও আইপিএস কিনেছিলেন। যেহেতু নতুন ভবনে নামাজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা, তাই সেগুলো খুলে নিয়ে এসেছেন।

এ বিষয়ে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহাবুব উদ্দিন মোল্লা বলেন, মসজিদের ইমাম ঝাড়ফুঁক ও তাবিজকবচের মাধ্যমে নারী-পুরুষের চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা ও প্রতারণা করে আসছেন। তাঁকে বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি তাঁর ইচ্ছেমতো কথিত চিকিৎসা চালিয়ে যান। তাই তাঁকে মসজিদের ইমাম পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইমাম আবদুল হাই বলেন, সভাপতি মাহাবুব উদ্দিন তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন ডাকুয়া বলেন, ওই জামে মসজিদটিতে বর্তমান কমিটি নিয়ে বিরোধ চলছে। সেই জেরে ইমাম আবদুল হাইকে বহিষ্কার করায় জটিলতা চরম পর্যায়ে গেছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও থানার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহীদুজ্জামান বলেন, মসজিদের মালামাল নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মেহেদী হাসান বাদী হয়ে আজ থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।