খুলনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ৩ মামলা, আসামি ১২৮৭
খুলনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে আরও তিনটি মামলা করেছে। খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা ও দাকোপ থানায় গতকাল মঙ্গলবার বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাগুলো করা হয়। তিন মামলায় ১৩৭ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দুই মামলায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর কথা নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে তারা একের পর এক ‘গায়েবি’ মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে।
সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খালিদ উদ্দীন বাদী হয়ে ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী ওরফে হেলাল, কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম (মনা), সদস্যসচিব শফিকুল আলম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, সদস্যসচিব এস এম মনিরুল হাসান উল্লেখযোগ্য। মামলায় ৩১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আসাদ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান লিটনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা খানজাহান আলী সড়কে মিছিল করে নাশকতার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় দুজনকে আটক করা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আটক দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সোনাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নিয়াজ মোরশেদ বাদী হয়ে গতকাল রাতে ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ বুধবার ওই মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহারে উল্লিখিত আসামিদের মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, সদস্যসচিব এস এম মনিরুল হাসান, মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব হাসান, সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির আহ্বায়ক মো. হাফিজুর রহমান, সদস্যসচিব সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান উল্লেখযোগ্য।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বলা হয়, গতকাল (মঙ্গলবার) সকালের দিকে আসামিরা ককটেল বোমা, দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও বাংলাদেশ বেতার (কেপিআইভুক্ত এলাকা) ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে গিয়ে তাঁদের ধাওয়া দিলে সবাই পালিয়ে যান। এ সময় দুজনকে আটক করা হয়।
মামলার ব্যাপারে কথা বলতে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমতাজুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ ছাড়া গতকাল দাকোপ থানায় বিএনপির ৫৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় দাকোপ থানা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। জেলা বিএনপি সূত্র জানায়, ২৯ ও ৩০ অক্টোবর রূপসা, তেরখাদা, ডুমুরিয়া, কয়রা ও ফুলতলা থানায় হাজারো নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চলমান আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতেই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে খুলনা মহানগরের আটটি থানায় অন্তত ৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ইতিমধ্যে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তল্লাশির নামে নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, নতুন মামলায় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদ আলী, দাকোপ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান এবং জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল মান্নান মিস্ত্রীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল রাত থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
খুলনা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান প্রথম আলোকে বলেন, ৩১ অক্টোবর শুধু সদর ও সোনাডাঙ্গা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা হয়েছে। অন্য কোনো থানায় মামলা হওয়ার তথ্য নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাশকতার ঘটনায় সব সময় সশরীর উপস্থিত থাকতে হবে এমনটা নয়। কোনো কোনো সময় নাশকতার পেছনে কেউ পেছন থেকেও ভূমিকা রাখতে পারেন। যৌক্তিকভাবে কেউ ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকলে তাঁকে আসামি করা হয়।