খাগড়াছড়ির নিহত যুবক মামুনের স্ত্রীর মামলা, এজাহারনামীয় ৩ জনই আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সংঘর্ষের পর ঘরবাড়ি ও দোকানে আগুন দেওয়া হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ফাইল ছবি: সংগৃহীত

খাগড়াছড়িতে নিহত যুবক মো. মামুনের স্ত্রী মুক্তা আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে মুক্তা তিনজনের নাম উল্লেখ করেছেন। তাঁরা হলেন মো. শাকিল, রফিকুল আলম ও দিদারুল আলম। এই তিনজনের মধ্যে রফিকুল আলম আওয়ামী লীগের নেতা ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র। আরেক আসামি দিদারুল তাঁর ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মো. শাকিলও আওয়ামী লীগের নেতা। এই তিনজনসহ ১০ থেকে ১২ জন অজ্ঞাতনামা ‘উপজাতি ও বাঙালি’র কথাও আসামি হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার এ মামলা করা হয়। তিন আসামিই গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে পলাতক।

গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামের এক বাঙালি যুবকের মৃত্যু হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে এ হত্যার প্রতিবাদে দীঘিনালায় বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বাঙালিদের অভিযোগ, মিছিলটি বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সংঘর্ষের একপর্যায়ে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।

দীঘিনালা উপজেলায় সংঘর্ষের জেরে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, পানছড়ি ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় ৩ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৫ জন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল ত্রিপুরা (৩০)। গত শুক্রবার রাঙামাটিতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে পাহাড়ি ও বাঙালিদের সংঘর্ষে নিহত হন অনিক কুমার চাকমা। তিনি কর্ণফুলী ডিগ্রি কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী। আহত হন অন্তত ৫৫ জন।

গণপিটুনিতে বাঙালি যুবক মামুনের মৃত্যুর পর এমন রটনা হয় যে পাহাড়িদের গণপিটুনিতেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এরপরই যত সংঘাত ও চারজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

মামুনের স্ত্রী মুক্তা আক্তার ১৯ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। সেখানে তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এসব ব্যক্তি হলেন খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার শালবন (শাপলার মোড়) এলাকার মো. শাকিল (২৭), পানখাইয়া পাড়ার রফিকুল আলম (৫৫) এবং ওই পাড়ারই দিদারুল আলম (৫০)। এ ছাড়া তিনি অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জন ‘উপজাতি ও বাঙালির’ নাম উল্লেখ করেন।

মুক্তা আক্তার আজ রোববার ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামীকে হত্যার পেছনে বাঙালি ও পাহাড়ি দোনোটাই আছে। উপজাতিদের (পাহাড়ি) চিনি নাই, তাই তাদের নাম দিই নাই।’  

আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের এ হত্যায় জড়িত থাকার ব্যাপারে মুক্তা আক্তার বলেন, ‘আমি তো বলি নাই তারা মেরেছে। তবে সন্দেহ হয় তারা জড়িত। আপনি পুলিশের কাছে খোঁজ নেন এদের নামে মামলা আছে কি না।’

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন মৃধা আজ প্রথম আলোকে বলেন, মো. শাকিল, রফিকুল আলম ও দিদারুল আলমের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এখন বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এ নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না।