এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেই উত্তর হোয়াটসঅ্যাপে, দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ, এক শিক্ষককে অব্যাহতি
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নের উত্তর হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে নাগেশ্বরী নিউ প্রতিশ্রুতি নামের বেসরকারি স্কুলের পরিচালক ও এক শিক্ষককে নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে প্রশাসন। একই সঙ্গে ওই কেন্দ্রের একটি কক্ষে স্মার্টফোন নিয়ে প্রবেশ করায় কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার হলে অতিরিক্ত উত্তরপত্র রেখে চলে যাওয়ায় হাসনাবাদ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহছেনা আক্তারসহ দুই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন পরীক্ষাকেন্দ্রের সুপার মোশারফ হোসেন।
আজ মঙ্গলবার ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা পরীক্ষা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। নাগেশ্বরী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ এবং নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপ কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
একাধিক অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, আজ এসএসসি পরীক্ষার ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের ওপর পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হলেও পরীক্ষার্থীদের সকাল ৯টার পরপরই আসন গ্রহণ করতে হয়। সকাল ৯টা ৫৩ মিনিটে পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নের হুবহু উত্তর লেখা কাগজের (হাতে লেখা ও কম্পিউটারে মুদ্রিত) ছবি কিছু অভিভাবকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে আসে। পরে ওই ছবিগুলো সংক্ষুব্ধ অন্য অভিভাবকদের মাধ্যমে স্থানীয় সাংবাদিকদের হাতে এলে ঘটনা জানাজানি হয়।
সংক্ষুব্ধ অভিভাবকদের অভিযোগ, পরীক্ষা শুরুর আগেই হুবহু উত্তর লেখা কাগজের ছবির মাধ্যমে পরীক্ষার হলে নকল সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব উত্তর পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গেও মিলে যাচ্ছে। এতে আগেই প্রশ্নফাঁসের ঘটনাও ঘটছে কি না, সন্দেহ তৈরি হয়। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে লিখিত ও এমসিকিউর উত্তর সরবরাহে পরীক্ষার হলের দায়িত্ব থাকা শিক্ষকেরাও জড়িত। এর আগে গণিত পরীক্ষার দিন পরীক্ষা শুরুর আগেই অঙ্কের সমাধান করা ছবি হোয়াটসঅ্যাপে লেনদেন হয়। এ বিষয়ে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
হোয়াটসঅ্যাপে আসা ছবিতে দেখা যায়, গ্যালাক্সি এ টোয়েন্টি ফোর মডেলের একটি ফোন থেকে এসব উত্তর লেখা কাগজের ছবি তোলা হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা ৫৩ মিনিটে মঞ্জুর আলম নামে একজন এসব ছবি অভিভাবকদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঞ্জুর আলম নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স–সংলগ্ন নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুলের শিক্ষক। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক শহিদুল ইসলাম ও শিক্ষক মঞ্জুর আলমকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। শহিদুল কচাকাটা কলেজের ডেমোনস্ট্রেটর (প্রদর্শক)।
এ ছাড়া একই দিনে নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের শৌচাগার থেকে ভেজা উত্তরপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রের ফটকের বাইরে এনে পুলিশ তাদের শরীর তল্লাশি করতে থাকে। এ সময় এক শিক্ষার্থীর কাছ একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়। পরে ওই পরীক্ষার্থীর বাবাকে ডেকে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে নিউ প্রতিশ্রুতি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের স্যারেরা (ইউএনও, ওসি) ডেকেছে। আমাদের কাছে যা যা জানতে চেয়েছে, আমরা বলেছি।’ শিক্ষক মঞ্জুর আলম বলেন, ‘কেন ডেকেছে, আমি কিছুই জানি না। আমাকে ডেকে যা যা জিজ্ঞাসা করেছে, সব বলেছি।’
আবদুল কাদের নামে একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমি প্রতি পরীক্ষায় আমার নাতনিকে নিয়ে পরীক্ষা হলে যাই। বাইরে দেখি মাস্টাররাও নকল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন। নাতনি প্রতিদিন বের হয়ে বলে ভেতরে অনেক স্যারে নকল নিয়ে যায়।’
তবে নাগেশ্বরী আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব মোশারফ হোসেন এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজকেই প্রথম স্মার্টফোন নিয়ে প্রবেশ করায় কেন্দ্রের ৭ নম্বর কক্ষের পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা সাফি মোল্লা নামের এক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফোনটি জব্দ করা হয়েছে।’
নাগেশ্বরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, ‘পরীক্ষা শুরুর পর থেকে নকল হিসেবে উত্তর ছড়াছড়ির বিষয়টি আমরা শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু কোথা থেকে উত্তর আসছে, এটা বলা যাচ্ছে না। এটা নাগেশ্বরীর বাইরে থেকেও হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে সজাগ আছি।’
নাগেশ্বরী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ বলেন, পরীক্ষাকক্ষে স্মার্টফোন নিয়ে প্রবেশ করায় এক শিক্ষককে চলমান পরীক্ষার সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁর ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। ফোনে পরীক্ষাসংক্রান্ত কোনো তথ্য রয়েছে কি না, তা যাচাই করা হবে। আপত্তিকর কিছু পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া নকল হিসেবে উত্তর ছড়ানোর ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদেরও একটি ফোন জব্দ করা হয়েছে।