রাজশাহীতে জিলাপির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৬০ টাকা
রাজশাহী নগরের গণকপাড়ার মোড়ে তখন বিকেল। রোজার প্রথম দিন শুক্রবার অনেক বিক্রেতাই একটা লম্বা টেবিলে ইফতারসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ইফতারসামগ্রী কিনতে সেসব অস্থায়ী দোকানের সামনে ক্রেতাদের ভিড়। তাঁদের প্রায় সবাই দাম নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছিলেন। সবচেয়ে বেশি আপত্তি জিলাপির দামে।
ক্রেতাদের ভাষ্য, এবার জিলাপির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে বিক্রেতা বলছেন, জিলাপি তৈরির সব উপাদানের দাম বেড়েছে। এ কারণে নিরুপায় হয়ে দাম বাড়িয়েছেন।
রাজশাহী নগরের কুমারপাড়া, সাহেববাজার, অলকার মোড়, লক্ষ্মীপুর এলাকা ঘুরেও জিলাপির দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে।
নগরের কালুমিস্ত্রির মোড়ের গৃহিণী আলিয়া রুপি বলেন, ‘দাম বাড়লেও কিছু করার নেই। খেতে তো হবে। এখন হয়তো আর প্রতিদিন জিলাপি কিনব না। মাঝেমধ্যে জিলাপি খাব।’
স্কুলশিক্ষক রেজিনা খাতুন নগরীর অলকার মোড় থেকে ইফতারসামগ্রী কিনে বাসায় ফিরছিলেন। জিলাপির কথা তুলতেই তিনি বলেন, ‘জিলাপির কেজি ১৮০ টাকা রাখাটা বাড়াবাড়ি। এ বছর ইফতারসামগ্রী কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য রোজার মাসের এই বাড়তি ব্যয় বহন করা কঠিন। শুনেছি, অন্যান্য দেশে রোজার মাসে জিনিসপত্রের দাম কমে। আমাদের দেশে দাম বাড়ে। বাজারদর নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা ক্রেতারা অসহায় হয়ে পড়েছি।’
মো. জামাল নামের একজন বিক্রেতা গণকপাড়ায় ফুটপাতের যেখানটায় ইফতারসামগ্রী দোকান নিয়ে বসেছেন, ওই জায়গা মূলত কাপড় ব্যবসায়ীদের দখলে থাকে। ফুটপাতের উচ্ছেদ অভিযানের পর ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাপড়ের দোকানগুলো পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছেন। এই সুযোগে সেখানে ইফতারসামগ্রীর দোকান নিয়ে বসেছেন মো. জামাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটু ভেতরে তাঁদের হোটেল রয়েছে। রমজান মাস উপলক্ষে এখানে ইফতারসামগ্রীর দোকান নিয়ে বসেছেন।
তাঁদের দোকানে ছোলা, জিলাপি, পিঁয়াজি, বিভিন্ন ধরনের চপ ও নিমকি সাজানো ছিল। জিলাপির দামের কথা জানতে চাইলে জামাল বলেন, গত বছর তাঁরা ১৪০ টাকা কেজি দরে জিলাপি বিক্রি করেছিলেন, এবার ১৬০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
গণকপাড়ায় রাস্তার পশ্চিম পাশে রহমানিয়া হোটেলের মালিক রিয়াজ আহমেদ খান ইফতারসামগ্রীর দোকান খুলে বসেছেন। তিনি বলেন, তাঁদের দোকানে রয়েছে ইফতারসামগ্রীর ৩৪টি পদ। এর মধ্যে দুই ধরনের জিলাপি ক্রেতাদের অন্যতম পছন্দ। বিশেষ জিলাপি এবার বিক্রি করছেন ৩৫০ টাকা কেজি দরে। গতবার এই জিলাপি বিক্রি করেছেন ৩০০ টাকা কেজিতে। আর সাধারণ জিলাপি এবার ১৯০ টাকা কেজি, যা গতবার ছিল ১৭০ টাকা।
নগরের কুমারপাড়া এলাকায় চাঁপাইয়ের কালাই হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট নামের রেস্তোরাঁয় মূলত হাঁসের মাংস ও কালাইয়ের রুটি বিক্রি করা হয়। সঙ্গে অন্য খাবার থাকলেও ক্রেতারা মূলত সেখানে রুটি খেতেই যান। বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তাঁরাও রঙিন কাপড়ে দোকান সাজিয়েছেন। কালাই রুটির পাশাপাশি বিক্রি করছেন জিলাপি, বেগুনি, পিঁয়াজিসহ কয়েকটি পদ। দোকানের কর্মচারী আশিক বলেন, তাঁদের দোকানেও জিলাপি ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে ওয়ারিশান চায়নিজ রেস্টুরেন্ট নামের রেস্তোরাঁর নিচে ইফতারসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন এর কর্মচারীরা। তাঁদের তালিকায় রয়েছে মোট ৩৮টি পদ। তবে চিকেন পরোটা ও শাহি জিলাপি অন্যতম আকর্ষণ। এবার এই জিলাপির দাম রাখা হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজি।
দোকানের একজন কর্মচারী বলেন, গতবার তাঁরা এই জিলাপি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। জিলাপি ভাজার সব উপাদানের দাম বেড়েছে। তাই দাম কেজিতে ৬০ টাকা বাড়িয়েছেন।
নগরের কুমারপাড়া এলাকার গোলাপ মামার হোটেল নামের রেস্তোরাঁর সামনেও টেবিলে ইফতারসামগ্রী নিয়ে বসেছেন কর্মচারীরা। তাঁদের রেস্তোরাঁর জিলাপিও এবার ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কর্মচারীরা ২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত দাম হাঁকছেন। গত বছর তাঁরা জিলাপি বিক্রি করেছেন ১২০ টাকা কেজি দরে।
তবে রোজার মাসে জিলাপির জন্য নগরের ঐতিহ্যবাহী বাটার মোড়ে ভিড় করেন ক্রেতারা। দোকানের বিক্রয়কর্মী শাহিন আলম বলেন, এবার তাঁরা ১৮০ টাকা কেজি দরে জিলাপি বিক্রি করছেন। গতবার দাম রেখেছিলেন ১৪০ টাকা কেজি।
বাটার মোড়ের ওই দোকান থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে জিলাপি কিনছিলেন আইনজীবী এজাজুল হক।
তিনি বলেন, ‘ইফতারিতে জিলাপি খেতে ভালো লাগে। কিন্তু সব জিনিসের সঙ্গে জিলাপির দামও বেড়েছে। এবার গত বছরের চেয়ে জিলাপির দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। এভাবে ইফতারসামগ্রীর প্রতিটা পদের দাম বেড়েছে। এটা রোজার মাসের মোট খরচের ওপর প্রভাব ফেলবে, যা নিয়ে চিন্তায় আছি।’