কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামানকে গাড়িসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবরুদ্ধ করে তিন ঘণ্টা আটকে রেখেছে শিক্ষক সমিতির কয়েক নেতা। এ সময় শিক্ষকদের একটি পক্ষ কোষাধ্যক্ষের পক্ষ নেয়। এতে শিক্ষকদের দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।
শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত অবরুদ্ধ অবস্থায় মূল ফটকে গাড়িতে অবস্থান করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। এরপর তিনি গাড়ি থেকে নেমে উপাচার্য বাংলোতে যান। আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপাচার্য স্যার। এখন বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে, সচল রাখতে কী করণীয়, এ বিষয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলার জন্য যাচ্ছি।’
এর আগে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে শিক্ষক সমিতির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়, কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় এবং প্রক্টরের কার্যালয়ে তালা দিতে যান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিতে গেলে তাঁরা দেখেন, প্রশাসন থেকে আগে থেকেই উপাচার্যের দপ্তরে তালা দেওয়া। ফলে উপাচার্যের দপ্তরে তালা দিতে পারেননি শিক্ষক সমিতির নেতারা। এরপর তাঁরা প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হয়ে দেখেন, কোষাধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান তাঁর গাড়ি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় তাঁরা মূল ফটকে অবস্থান নেন এবং কোষাধ্যক্ষকে গাড়ির চাবি দিয়ে চলে যেতে বলেন। এতে রাজি না হওয়ায় শিক্ষক সমিতির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ করে কোষাধ্যক্ষকে পথরুদ্ধ করে রাখেন।
এ সময় শিক্ষকদের একটি অংশ তালা লাগানো নিয়ে শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা সংস্কৃতি বন্ধের দাবি তোলে শিক্ষকদের অংশটি।
এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ভর্তি পরীক্ষার দিন কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। কিন্তু তাঁরা পরবর্তীকালে লিখল, শিথিল থাকবে। এটা একপ্রকার প্রতারণা। আমরাও শিক্ষক সমিতির সদস্য। এভাবে শিক্ষক সমিতি খেয়াল-খুশিমতো চলতে পারে না। আমরা এই তালা সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চাই। শিক্ষক সমিতিকে নিয়ে নেতারা যে প্রতারণা করলেন সাধারণ শিক্ষকদের সঙ্গে, সেই প্রতিবাদে আমরা এখানে এসেছি।’
২৩ এপ্রিল শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি চিঠিতে তাদের সাতটি দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। শিক্ষক সমিতির দেওয়া সাত দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২৫ তারিখ সকালে শিক্ষক সমিতির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁদের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। তবে ২৭ এপ্রিল গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থাকায় শিক্ষক সমিতি কর্মসূচি শিথিল করে এবং তালা খুলে দেয়। তবে আজকের অফিসের সময় শেষ হওয়ার পর আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন দপ্তরে তালা দেওয়া হয়।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যত অনিয়ম হচ্ছে, তার সহায়ক হচ্ছেন কোষাধ্যক্ষ। আর এই অনিয়মগুলো তিনি চালু করেছেন। অর্থ কমিটির বিশৃঙ্খলা, শিক্ষকদের টাকাপয়সা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করাসহ এই যে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা, তার সবকিছুর পেছনে আছেন তিনি। এ কারণে শিক্ষকেরা সাধারণ সভায় তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। সেই কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পরিষেবা পাবেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের মূল দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রক্টর হিসেবে যদিও শিক্ষার্থীদের ওপরে আমার দায়িত্ব, তারপরও সার্বিক শৃঙ্খলার বিষয়টা আমাদের ওপরে আসে। আজকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। আজকে কোষাধ্যক্ষকে তারা এভাবে পথ আটকে দিয়েছে। আমি মনে করি, শিক্ষক হিসেবে তাঁরা নৈতিকতার জায়গা লঙ্ঘন করেছেন।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের মুঠোফোনে কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।