রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া সবজি চাষ, ৭ লাখ টাকা আয় জব্বারের
দশম শ্রেণিতে পড়া আবদুল জব্বার চাষের কাজে সহযোগিতা করতেন বাবাকে। সেই থেকে কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজে বর্গা জমিতে সবজি চাষবাদ শুরু করেন। বর্তমানে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে এলাকায় সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত হয়েছেন তিনি। সবজি বিক্রি করে বছরে তাঁর আয় হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা।
আবদুল জব্বারের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের উত্তর শ্রীমাই গ্রামে। বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে শ্রীমাই ফরেস্ট অফিসের পাশে ৪৬০ শতক বর্গা জমিতে তাঁর সবজিখেত। গত বুধবার সেখানে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
২০১৬ সালে ব্যাংকঋণ ও বড় ভাইয়ের কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সবজিখেত করেন তিনি। আবদুল জব্বার জানান, সীতাকুণ্ড ও বগুড়া থেকে আধুনিক জাতের বীজ ও চারা আনেন তিনি। আবার নিজেও বীজ তৈরি করেন। পেঁপে, সিলেটি জাতের কচু, দেশি জাতের পুতা বেগুন, মরিচ, আলু, শিম, কাঁকরোল, আদা ও টমেটো চাষ করেছিলেন প্রথম দিকে। প্রথম বছরই প্রায় ৯ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেন জমি থেকে। সংসারের সব খরচ দিয়ে ও ধার শোধ করে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে নতুন বিনিয়োগ করেন।
ফসলের খেতে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না আবদুল জব্বার। জমিতে গোবর ও কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেন তিনি। এ ছাড়া কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেন তিনি। বিশেষ করে হলুদ আঠালো ফাঁদ ও ফেরমোন ট্র্যাপ ব্যবহার করেন তিনি।
তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে আবদুল জব্বার পরিবারের ষষ্ঠ সন্তান। পাহাড়ি এলাকায় তাঁদের নিজস্ব ১২০ শতক জমিতে ধান চাষ করতেন তাঁর বাবা। এসএসসির পর বিদেশে যাওয়ার ভিসা ফেরত দিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন আবদুল জব্বার। ২০১৮ সালে চক্রশালা কৃষি উচ্চবিদ্যালয়ে কৃষি বিভাগের আয়োজনে দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। সেখানেই বিষমুক্ত সবজি চাষে অনুপ্রাণিত হন জব্বার। পরে নিজের সবজিখেতকে রাসায়নিক বিষমুক্ত করতে কাজ শুরু করেন। এরপর তাঁর লাভ আরও বেড়ে যায়। ২০১৯ সালে ১৭ লাখ টাকায় একটি ট্রাক্টরও কেনেন কৃষির আয় থেকেই।
আবদুল জব্বার বলেন, মৌসুম কোনো বিষয় নয়। তাঁর সবজিখেতে বছরজুড়ে অন্তত ১০ জাতের সবজি চাষ থাকে। প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খেতে কাজ করতে হয়। তাঁর সঙ্গে দৈনিক ৮০০ টাকা বেতনে আরও ৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিন দুটি টেম্পো ও তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে সবজি নিয়ে যান পটিয়ার কমলমুন্সির হাটে বেচাকেনার জন্য। আবার পাইকারি ক্রেতারাও খেতে এসে সবজি কেনেন নেন অনেক সময়। বর্তমানে সবজি চাষ করে মাসিক তাঁর গড় আয় হচ্ছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান বলেন, আবদুল জাব্বার একজন কৃষক পরিবারের সন্তান। অল্প বয়স থেকেই তাঁর অভিজ্ঞতা ও কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ তাঁকে এই জায়গায় এনেছে। তাঁকে দেখে অনেকেই উৎসাহী হয়েছেন কৃষিকাজে। উপসহকারী কৃষি অফিসার দিপন চৌধুরীর সহযোগিতায় তাঁকে সময়োপযোগী প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। তিনি নিজে বিভিন্ন সময়ে তাঁর খামার পরিদর্শনে যান।