ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতে অচলাবস্থা, আইনজীবীদের ৩ দিনের কর্মবিরতির ডাক

আজ দুপুর ১২টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৩ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা করে আইনজীবী সমিতি
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতের কর্মচারীদের কর্মবিরতির পর এবার আইনজীবী সমিতি কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের কর্মবিরতি চলবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর আগে আজ সকালে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছে। তবে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলায় আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে বিচারিক কার্যক্রমই অনুষ্ঠিত হয়নি।

আজ দুপুর ১২টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে ৩ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা করেন সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। এ সময় তাঁরা তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেলা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১–এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অপসারণসহ জেলা নাজির মুমিনুল ইসলাম চৌধুরীর দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করেন। কর্মসূচি ঘোষণার সময় সেখানে সমিতির সাবেক সভাপতি শফিউল আলম, শফিকুল ইসলাম, এম এ করিম, মাহবুব আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

এর আগে আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে গত রোববার থেকে মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। আইনজীবী ও আইনজীবী সমিতি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ তুলে এই বিচারকের প্রত্যাহার দাবি করে আসছে জেলা আইনজীবী সমিতি। তবে বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ, কর্মচারীদের মারধর, মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার পাল্টা অভিযোগে আদালতের কর্মচারীরা গতকাল বুধবার দিনভর কর্মবিরতি পালন করেন।

গতকাল সকালে কর্মবিরতি স্থগিতের জন্য জেলা জজ শারমিন নিগার জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দিলেও তাঁরা কর্মবিরতি চালিয়ে যান। তবে আজ সকালে কর্মচারীরা তাঁদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

মোস্তফা কামাল বলেন, ‘কর্মবিরতি স্থগিত করে আমরা কর্মস্থলে ফিরেছি। কিন্তু আইনজীবীদের কেউই আদালতে আসেনি। তাই কোনো আদালতেই বিচারকাজ শুরু হয়নি।’

আরও পড়ুন

আইনজীবীদের কর্মবিরতির বিষয়ে আজ বেলা দেড়টার দিকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেলা জজ শারমিন নিগার, বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে অপসারণসহ নাজির মুমিনুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এদিকে এজলাস চলাকালে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও গতকাল থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি ১ জানুয়ারির। ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঁইয়াসহ কয়েকজন আইনজীবী বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন। তবে তানভীর ভূঁইয়ার দাবি, তিনি বিচারককে গালি দেননি। ভিডিওটি সম্পাদনা করা হয়েছে।

ভিডিওর প্রসঙ্গে মফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের আইনে কোথাও নেই যে এজলাসে ভিডিও করা ও ছবি তোলা যায়। নাজির মুমিনুলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় জেলা জজ এমন করছেন। কেন? জেলা জজের কী স্বার্থ আছে এখানে?’

সভাপতি তানভীর ভূঁইয়া বলেন, ওই আদালতের এজলাসে একজন কর্মচারী ভিডিও করছিলেন। তাঁকে ভিডিও বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। ওই কর্মচারীকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলা হয়েছিল, বিচারককে নয়। আইনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও কলঙ্কিত করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিডিও করে তা সম্পাদনা করে প্রচার করা হয়েছে।

বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি

আইনজীবী ও কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের অচলাবস্থা এখনো নিরসন হয়নি। গতকাল থেকে কোনো আদালতেই বিচারিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা।

বাঞ্ছারামপুর থেকে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি শীতের সকালে অনেক কষ্ট করে আদালতে এসেছেন। এতে তাঁর অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তিনি হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।