মাগুরায় এক মামলা ঘিরে আওয়ামী লীগের বিরোধ প্রকাশ্যে

তানভীর নামে এক যুবকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে স্থানীয়দের মানববন্ধন। ৫ মার্চ, মহম্মদপুর, মাগুরা
ছবি: সংগৃহীত

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় এক নারী জনপ্রতিনিধির নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কটূক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পুরোনো বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। বিবদমান পক্ষ দুটি মাগুরার দুই সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার ও সাইফুজ্জামান শিখরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে স্থানীয় নেতারা বলছেন, ব্যক্তিগত বিরোধকে এখানে রাজনৈতিক রং দেওয়া হচ্ছে।

রোববার মহম্মদপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এক যুবককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে তানভীর রহমান (৩৫) নামের ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি কারাগারে আছেন।

পেশায় ইট ব্যবসায়ী তানভীর স্থানীয়ভাবে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। ফেসবুকে কটূক্তি, আপত্তিকর ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বেবী নাজনীন।

ওই মামলার প্রতিবাদে রোববার ‘মহম্মদপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ’ ও ‘মহম্মদপুরের সর্বস্তরের জনগণ’ নামে দুটি ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে কয়েক শ নারী-পুরুষ অংশ নেন। দুপুরে উপজেলা সদরের ডাকবাংলো চত্বর থেকে শুরু করে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এসে মানববন্ধনে মিলিত হয়।

মানববন্ধনে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. ঈদুল শেখ, উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক শারমীন আক্তারসহ কয়েকজন বক্তব্য দেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামরুল হাসান (অভিযুক্ত যুবকের ভাই) ও বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান প্রমুখ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মামলার প্রতিবাদে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপি পাঠ করেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য নাজনীন রব্বানী।

বক্তারা বলেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বেবী নাজনীনের দুর্নীতি ও অপকর্মের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করায় যুবলীগ নেতা তানভীরের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে ওই যুবককে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে বেবী নাজনীনের বিচার দাবি করা হয়।

এদিকে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে মানববন্ধনের পর ঘটনার সঙ্গে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজনীন রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর (বেবী নাজনীন) কারণে আমরা শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত। এখানে আওয়ামী লীগ সঠিক নিয়মে চলছে না। আমরা মনে করি, ওই ছেলে (তানভীর) সত্য কথাই বলেছেন। তাই আমরা মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বেবী নাজনীন বলেন, ‘আমি একটি পক্ষের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তার (তানভীর) সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সে আমার নামে মানহানিকর ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করে আসছে। তাকে নিবৃত্ত করতে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বহুবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষে মামলা করেছি। একজন নারীর সম্মানের প্রশ্নে তারা রাজনৈতিক ব্যানারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।’

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহম্মদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত। আওয়ামী লীগ নেত্রী বেবী নাজনীন ওই আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। অন্য পক্ষে অভিযুক্ত যুবকের ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামরুল হাসান মাগুরা-১ (শ্রীপুর-সদর) আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের অনুসারী। রোববার মানববন্ধনে যাঁরা নেতৃত্ব দেন, তাঁরা সবাই সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের বিরোধী হিসেবে পরিচিত।

মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেটা আগে থেকেই ওই নেত্রীর নামে এসব লেখে বলে শুনেছেন। এর কোনো বাস্তবতা আছে কি না, তিনি জানেন না। এটা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে লেখার মধ্যে সংসদ সদস্যকে (বীরেন শিকদার) ইঙ্গিত করে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তিনি তার প্রতিবাদ জানান। এ বিষয়ে দলীয় ব্যানার ব্যবহার করে মানববন্ধন করাও ঠিক হয়নি।