কয়রায় বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ
সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডলের অনিয়ম-দুর্নীতিতে বাধা দেওয়ায় এক নিরাপত্তাকর্মীর বাবাকে মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন কমিউনিটি প্যাট্রোলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্য মোস্তফা শরীফ।
মোস্তফা শরীফ খুলনার কয়রা উপজেলার ৫ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা। বনে অপরাধ দমনে বন বিভাগের নিয়োগপ্রাপ্ত সিপিজি সদস্য হিসেবে ৫ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি।
মোস্তফা শরীফ জানান, সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল চলতি বছর প্রজনন মৌসুমে (১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস) যখন সুন্দরবনে জেলেদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, তখন আর্থিক সুবিধা নিয়ে জেলে ও মৌয়ালদের বনে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দেন। এই অবৈধ প্রবেশকারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য তাঁকে চাপ সৃষ্টি করা হয়। প্রথম দিকে অনেকটা বাধ্য হয়ে জেলে ও মৌয়ালদের কাছ থেকে মাথাপিছু এক হাজার টাকা আদায় করতেন মোস্তফা। পরে এ কাজে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নির্মল কুমার শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে দিয়ে মোস্তফার বাবা শাহাদাৎ সানার বিরুদ্ধে বন আইনে একটি মামলা করেন।
মোস্তফা শরীফ আরও জানান, গত ২৭ জুলাই সুন্দরবনসংলগ্ন ৫ নম্বর কয়রা গ্রামের পাশের শাকবাড়িয়া নদীর চরে অবৈধ মাছসহ একটি নৌকা দেখে তিনি বনরক্ষীদের খবর দেন। খবর পেয়ে বনরক্ষীরা সেখানে এসে নৌকা ও মাছ জব্দ করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় কাউকে আটক দেখানো হয়নি। তবে নৌকায় যে পরিমাণ মাছ ছিল বন বিভাগের জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে তার অনেক কম।
পরবর্তী সময়ে ওই ঘটনায় গত ২৯ জুলাই কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা হয়। ওই মামলায় মোস্তফার বাবা শাহাদাৎ সানার নামও সংযুক্ত করা হয়।
মোস্তফা শরীফের দাবি, ‘মূল ঘটনার সঙ্গে মামলার বিবরণের অসংগতি আছে। মামলায় ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে সুন্দরবনের গহিনে। অথচ নৌকা ও মাছ জব্দ করা হয়েছে লোকালয়–সংলগ্ন নদীর চর থেকে। আর মাছসহ যে নৌকা জব্দ করা হয়েছে, তার মালিক ৫ নম্বর কয়রা গ্রামের অলিউল্লাহ সানা। ওই ঘটনার সঙ্গে আমার বাবার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।’ এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও চক্রান্তকারীদের বিচার দাবি করছেন তিনি।
৫ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল্লাহ সরদার বলেন, ‘মোস্তফার বাবা শাহাদাৎ সানার একটি চিংড়িঘের আছে। তিনি ওই ঘের দেখাশোনা করেন। গত বন্ধ মৌসুমে তিন মাসের মধ্যে তিনি একবারও সুন্দরবনে প্রবেশ করেননি। যেদিন গ্রামের পাশ থেকে বন বিভাগ নৌকা ও মাছ জব্দ করেছেন, ওই দিনও তাঁকে নিজের মাছের ঘেরে কাজ করতে দেখেছি। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’
মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমার সঙ্গে মোস্তফা শরীফের ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই। তাঁর বাবার বিরুদ্ধে অপরাধের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকায় মামলা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি সত্য নয়।’